রক্তে sgpt বেড়ে গেলে কি হয়?
যদি কারো লিভারের সমস্যা দেখা যায় তাহলে ডাক্তার তাকে এসজিপিটি টেস্ট দিয়ে থাকেন। যাদের লিভারে সমস্যা থাকে তাদের এসজিপিটি এর লেভেল বেশি হয়। অনেকেই জানেন না রক্তে sgpt বেড়ে গেলে কি হয়? আজকে আমি আলোচনা করবো রক্তে sgpt বেড়ে গেলে কি হয়? আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন যা কিনা কোন ডাক্তার কখনোই বলবে না।
রক্তে sgpt বেড়ে গেলে কি হয়?
রক্তে sgpt বেড়ে গেলে কি হয় এটা জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে এসজিপিটি কিভাবে তৈরী হয়, এসজিপিটি এর কাজ কি? কখন এসজিপিটি তৈরী হয় ইত্যাদি। আমি প্রথমেই বলে নিই এসজিপিটি কিভাবে তৈরী হয় এবং এসজিপিটি কি?
এসজিপিটি কি?
সহজ ভাষায় বললে এসজিপিটি হলো লিভারের এক এনজাইমের নাম। একে এলানিন আমিনোট্রান্সফেরাজ এনজাইমও বলে যা কিনা শুধুমাত্র লিভারের কোষে পাওয়া যায়। যদি কোনভাবে বা কখন লিভাবের কোষ ড্যামেজ হয়ে যায় তাহলে এসজিপিটি লিভারের বাহিরে চলে আসে। এবং রক্তে মিশে যায়। যার ফলে এসজিপিটির মাত্রা বেড়ে যায়। আর তখন রক্তে এসজিপিটির মাত্রা টেস্ট করে লিভারের বর্তমান অবস্থা জানা যায়।
লিভারের বর্তমান অবস্থার ভালো ভাবে জানার জন্য এসজিপিটি টেস্টের সাথে আরো কিছু টেস্ট করা হয়। এর ভিতর আছে এলকানিন ফসফেট (ALP), অ্যাসপার্টেট অ্যামিনোট্রান্সফেরেজ (AST), এবং বিলিরুবিন টেস্ট। যদি এখানের কোন একটাও বেশি থাকে তাহলে বুঝতে হবে লিভারে কোন সমস্যা হয়েছে।
অস্বাভাবিক এসজিপিটি মাত্রা লিভারের সমস্যা যেমন ভাইরাল হেপাটাইটিস, অ্যালকোহলযুক্ত লিভার ডিজিজ, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি), ঔষুধের জন্য লিভারে সমস্যা হওয়া বা লিভার ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে হার্ট ফেইলুর বা মাসল ইনজুরি / মাংশপেশিতে ইনজুরির জন্যও এসজিপিটি টেস্ট করা লাগতে পারে এবং তখন এসজিপিটির মাত্রা বেশি হতে পারে।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, এসজিপিটির মাত্রা যে কোন সময় উঠানামা করতে পারে। আর অনেকেই ভাবেন যে, এসজিপিটির মাত্রা বেশি হলেই লিভারে সমস্যা। আসলে বিষয়টা তেমন না। এসজিপিটির মাত্রা বেশি হলেই যে লিভারে সমস্যা তা কিন্তু আসলে না। লিভারে সমস্যা বুঝার জন্য অন্যান্য ইমেজিং টেস্ট যেমন লিভার বায়োস্কপি বা সিটিস্ক্যানের দরকার হতে পারে। শুধুমাত্র ডাক্তাররাই এসজিপিটি মাত্রা দেখে বলতে পারবেন যে আরো টেস্ট দরকার কিনা।
রক্তে sgpt বেড়ে গেলে কি হয়?
আগেই বলেছি রক্তে এসজিপিটি তখনই বাড়ে যখন লিভারে সমস্যা হয়। যদি আপনার রক্তে এসজিপিটি বাড়ে তাহলে সাধারণভাবে বলা যেতে পারে আপনার লিভারের কোষগুলো নষ্ট হচ্ছে। লিভারের কোষ নষ্ট হলে আপনার লিভারের কাজ করার ক্ষমতা কমতে থাকবে। রক্তে এসজিপিটি বেড়ে গেলে অনেক কিছু হতে পারে। আর যদি সঠিক চিকিৎসা না করানো হয় তাহলে লিভার ক্যান্সার বা লিভার সিরোসিসও হতে পারে। লিভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। যেমন রক্তকে ফিল্টার করা, খাবার দ্রব্য জমা রাখা, রক্ত জমাট বাধার জন্য প্রোটিন তৈরী করা, পিত্তরস তৈরী করা ইত্যাদি। যদি লিভারে সমস্যা হয় তাহলে এসব গুরুত্বপূর্ণকাজে ব্যাঘাত ঘটবে। এখানে আমি কিছু সিম্পল রোগের নাম বলতেছি।
রক্তে sgpt বেড়ে গেলে নিন্মোক্ত রোগ হতে পারে-
- জন্ডিস (ত্বক এবং চোখের হলুদ হওয়া)
- পেটে ব্যথা বা ফুলে যাওয়া
- ক্লান্তি বা দুর্বলতা
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- ক্ষুধা হ্রাস বা ওজন হ্রাস
- পা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়া
- রক্তপাত সহজে না কমা
- বিভ্রান্তি বা স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে অসুবিধা
যদি লিভারের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এটা লিভার ফেইলুর বা অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগ লিভার ক্যান্সার এবং কিডনি ব্যর্থতা, অস্টিওপোরোসিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ভাইরাল হেপাটাইটিস, অ্যালকোহল-সম্পর্কিত লিভার ডিজিজ, অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, অটোইমিউন হেপাটাইটিস এবং লিভার ক্যান্সার সহ অনেকগুলি রোগ রয়েছে যা লিভারের এসজিপিটি বাড়ার কারণে হতে পারে। লিভারে অনেক রোগ হতে পারে। এর ভিতর কোন রোগের চিকিৎসা কেমন হবে তা নির্ভর করে লিভারের রোগের কারণের উপর। তবে এর ভিতর জীবন যাত্রা পরিবর্তনসহ অনেক ক্ষেত্রে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনও লাগতে পারে।
রক্তে sgpt বেড়ে গেলে কি হয়? – জন্ডিস
যখন রক্ত প্রবাহে বিলিরুবিন বেশি হলে দেহ হলুদ হয়ে যায়। বিশেষ করে ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যায়। রক্তের রেড ব্লাড সেল বা লোহিত রক্ত কণিকা বা আরবিসি যখন ভেঙ্গে যায় তখন তা থেকে বিলিরুবিন তৈরী হয়। আরবিসি এর লাইফ ১২০ দিনের। ১২০ দিন পর তা প্লীহাতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। আর ধ্বংস হবার পর তা লিভারে গিয়ে প্রক্রিয়াজাত হয়ে বিলিরুবিনে পরিণত হয়। লিভার সাধারণত বিলিরুবিন দেহ থেকে বের করে ফেলে। যদি লিভার সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে বিলিরুবিন দেহে থাকতে পারে। যা কিনা জন্ডিস হওয়ার কারণ।
ভাইরাল হেপাটাইটিস, অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, নন-অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, অটোইমিউন হেপাটাইটিস, পিত্তথলির পাথর এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার সহ বিভিন্ন অবস্থার কারণে জন্ডিস হতে পারে। জন্ডিসের লক্ষণগুলির মধ্যে গাঢ় প্রস্রাব, ফ্যাকাশে মল, ক্লান্তি এবং পেটে ব্যথা অন্যতম।
জন্ডিসের চিকিৎসা জন্ডিসের কারণের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি জন্ডিসের কারণ হেপাটাইটিস এ হয়, তবে চিকিত্সার মধ্যে বিশ্রাম, জলশূন্যতা এবং ডাক্তারের পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অ্যালকোহলিক লিভার রোগের ক্ষেত্রে, অ্যালকোহল ব্যবহার বন্ধ করা চিকিত্সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিছু ক্ষেত্রে, পর্যবেক্ষণ এবং চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।
আপনি যদি সন্দেহ করেন যে আপনার জন্ডিস হতে পারে বা ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলি অনুভব করছেন, তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি। ডাক্তার আপনার সব লক্ষণ দেখে কারণ জানার চেষ্টা করবেন এবং মেডিসিন দিবেন।
জীবনের তাড়াহুড়ো আমাদের এতটাই ব্যস্ত করে তুলেছে যে আমরা প্রায়শই আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে ভুলে যাই। স্বাস্থ্যকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে, নিয়মিত শরীর পরীক্ষা করার জন্য সময় নেওয়া নিশ্চিত করুন। আপনার চাপের মাত্রা কমাতে পারে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি যদি লিভার সম্পর্কিত কোনো রোগের লক্ষণের সম্মুখীন হন, তাহলে আজই সমস্ত প্রয়োজনীয় ল্যাব পরীক্ষা করুন এবং একজন ভালো ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন, কারণ স্বাস্থ্যই আসল সম্পদ।
SGPT সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন আছে? থাকলে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমি উত্তর দিতে চেষ্টা করবো।
Comments
Post a Comment