বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?

সাধারণত বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমান বয়ষ্কদের থেকে বেশি থাকে। তবে যদি বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন কম থাকে তা অনেক চিন্তার কারণ। কারণ বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বেশি থাকার বদলে কম থাকার অর্থ হলো ঐ বাচ্চার যকৃত বা লিভার বা হাড়ে কোন সমস্যা আছে। আজকে আমি আলোচনা করবো বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে, বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন কত থাকে, বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ, বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার ইত্যাদি। এছাড়া আমি বাচ্চাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এমন কয়েকটি খাবারের নাম বলবো।

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?

আসলে দুনিয়াতে এমন কোন খাবার নাই যা কিনা হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। ডাক্তাররা সাধারণত আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের জন্য উপদেশ দেন। কারণ হিমোগ্লোবিন তৈরীর জন্য আয়রন দরকার হয়। আর ফুসফুসের অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনে আয়রনের সাথে মিলে সারা দেহে পরিবাহিত হয়। আয়রন বিভিন্ন কারণে দরকার হয়। যেমনঃ

  • সারা দেহে অক্সিজেন পরিবহন করে
  • পেশির মেটাবলিজম কন্ট্রোল করে
  • কানেক্টিভ টিস্যু মেইনটেইন করে
  • দৈহিক বৃদ্ধি
  • স্নায়ুতন্ত্রের উন্নয়ন
  • কোষের কার্যকারিতা
  • কিছু হরমোন তৈরী করে

যেসকল শিশুরা মায়ের স্তন পান করে তাদের সাধারণত কোন খাবার দরকার হয় না। কারণ মায়ের দুধেই প্রয়োজনীয় আয়রন থাকে। তবে যারা বাহিরের দুধ খায় তাদের এক্সট্রা আয়রন দরকার হতে পারে। এখানে আমি বেশ কিছু খাবারের নাম দিচ্ছি যা কিনা আয়রনের চাহিদা পূরণ করবে।

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ার কোন নির্দিষ্ট খাবার নাই। তবে এর জন্য আপনাকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আবার যদি এমন হয় যে, বাচ্চা অনেক ছোট তাহলে বাচ্চার মা কে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর খাবারের নাম দেওয়া হলো।

১. বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?চর্বি ছাড়া মাংসে

মাংস এবং হাস মুরগিতে প্রচুর পরিমাণে হিম আয়রন থাকে। আর এসব হিম আয়রন শরীরে সহজে হজম হয়। গরুর মাংসে, বিশেষ করে লিভারে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। প্রায় 100 গ্রাম আয়রনে ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।

এছাড়া দেশি মুরগী এবং টার্কি মুরগীর মাংসও অনেক ভালো আয়রনের উৎস।

আমার মতে আপনার বাচ্চাকে চর্বি খাওয়ানো উচিৎ না। নরম,ভালো ভাবে রান্না করা চর্বিহীন মাংশ খেতে দিতে হবে। আর রান্নার সময় মাংশের চর্বি দূর করতে ভুলবেন না। চর্বিতে খুব কম পরিমাণ আয়রন থাকে। টোমেটোর সাথে মাংশ দিয়ে রান্না করলে আরো বেশী আয়রন পাওয়া যায়।

২. বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে? Fortified cereals

Fortified cereals ও ওট্মিল বাচ্চাদের পর্যাপ্ত আয়রন এর আয়রন নিশ্চিত করার অন্যতম ভালো উপায়।। আ

আয়রন ফর্টিভাইড ক্যারেলস সাধারণত বাচ্চাদের প্রতিদিনের আয়রনের চাহিদা পূরণ করে ফেলে। আর একদিন একটি বাচ্চাকে কতটুকু ক্যারেলস খাওয়াতে হবে তার পরিমান এর গায়েই লাগানো থাকে। তাই কেনার সময় শিউর হয়ে নিবেন যে, এটা আপনার বাচ্চার জন্য প্রতিদিনের চাহিদার ১০০% আয়রণের চাহিদা পূরন করে কিনা। ড্রাই কেরেলস যেমন Cheerios এ বেশি পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায়।

সাধারণত এক কাপ কাচা ক্যারেলসে ৩.৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।

যদি আপনার মনে হয় যে, আপনার বাচ্চার ভিটামিন সি দরকার তাহলে ক্যারেলস এর সাথে ভিটামিন সি এর খাবার এড করে দিতে পারেন। যেমন স্ট্রবেরি, বা ব্লুবেরি বা লেবু বা কমলা ইত্যাদি।

৩.বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?কলাতে

যাদের রক্ত স্বল্পতা আছে তারা কলা খেতে পারেন। কারণ কলা খেলে শরীরে আয়রন, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়। আর এসব এনেমিয়া বা রক্তস্বল্পতার জন্য দরকারী। এছাড়াও কলাতে ফাইবার, পটাশিয়ান, ভিটামিন বি৬, এবং ভিটামিন সি পাওয়া যাওয়া। ১০০ গ্রাম কলায় ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।

৪.বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?সয়াবিন

কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় হলো সয়াবিন। যাদের করোনারি সংবহন তন্ত্রে সমস্যা, বা করোনারি হার্ট ডিজিজ আছে তারা নিয়মিত সয়াবিন খাবেন। এতে করে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সয়াবিনে আরয়ন আছে প্রচুর পরিমানে। প্রায় ১০০ গ্রাম সয়াবিন থেকে ৮.৩ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। শুধু মাত্র এক কাপ রান্না করা সয়াবিনের বীজ আপনার শিশুর প্রতিদিনের আয়রনের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

৫.বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?সবুজ শাক সবজি

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সবুজ শাকসব্জি এর জুড়ি মেলা ভার। কারণ আমাদের পরিচিত সবুজ শাক সবজি যেমন পালংশাক, পুই শাক, কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে।, আর শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে রাফেজ যা কিনা মল তৈরীতে সাহায্য করে। এসব রাফেল খাদ্যনালীর ক্যান্সার কমাতে সাহায্য করে। শাকে ভিটামিন এ , ভিটামিন সি সহ অনেক প্রকারের ভিটামিন থাকে। এসব খাদ্য উপাদান দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে যার ফলে সহজে রোগ বালাই হয় না।

১০০ গ্রাম শাক থেকে ২.৯৫ মিলি গ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।

৬.বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?খেজুর

খেজুরের পুষ্টিগুণ যদি বলতে হয় তাহলে তা সারাদিন লিখেও শেষ করা যায় না। ফলটি প্রচুর প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং পুষ্টিতে ভরপুর।

এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এগুলি মস্তিষ্ককে উন্নত করে, প্রসব বেদনা বা বাচ্চাকে নরমালে প্রসব করতে সাহায্য করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, আপনার ত্বকের উন্নতি করে এবং চুল পড়ার হার কমায় ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরণের খেজুর পাওয়া যায় যেমন গাঢ় বাদামী শুকনো খেজুর, ফ্যাকাশে বাদামী শুকনো খেজুর, সেইসাথে প্রক্রিয়াজাত খেজুর। এর মধ্যে, গাঢ় বাদামী শুষ্ক খেজুরে সর্বোচ্চ আয়রনের পরিমাণ রয়েছে যার পরিমাণ প্রতি 100 গ্রাম খেজুরে 4.79 মিলিগ্রাম।

সর্বশেষঃ বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ট্রাস্টেড সোর্স অনুসারে, প্রায় 12 শতাংশ শিশু তাদের প্রথম বছরে এবং প্রায় 8 শতাংশ বাচ্চাদের মধ্যে আয়রনের মাত্রা কম থাকে।

আপনার সন্তানের জন্য খাবার থেকে তাদের পুষ্টি পাওয়া সর্বদাই উত্তম, কিন্তু যদি আপনার ডাক্তার মনে করেন আপনার সন্তানের আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা হতে পারে, তাহলে তারা আয়রন সাপ্লিমেন্ট লিখে দিতে পারেন।

আপনার ডাক্তার আপনাকে যে নির্দেশনা দেন তা অনুসরণ করুন এবং সমস্ত সাপ্লিমেন্টকে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। অত্যধিক আয়রন গ্রহণ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

প্রথমে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে আপনার শিশুকে কখনই আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেবেন না। বেশীরভাগ বাচ্চাদের সাপ্লিমেন্টারী আয়রনের প্রয়োজন নেই।

Comments

Popular posts from this blog

জরায়ু কেটে ফেললে কি সহবাস করা যায়?