গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কি হয় ?

আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কি হয়? অনেকেই বলেন যে, গর্ভবতী অবস্থায় তার স্বামী প্রটেকশন ইউজ করতে চায় না। ফলে একবার গর্ভবতী হওয়ার পরেও কি বীর্য ভিতরে গেলে কি গর্ভবতী হওয়ার চান্স আছে কি না। গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কি হয় তা জানার আগে জানতে হবে একজন মহিলা গর্ভবতী কিভাবে হয়? গর্ভবতী হলে তার দেহে কি পরিবর্তন হয়? আর সেক্সের সময় পুরুষের শুক্রাণু কোথায় যায়? আজকে আমি এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কি হয় ?

গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কি হয় ?

গর্ভবস্থায় বীর্য ভিতরে কোথায় যায়, কিভাবে একজন মহিলা গর্ভবতী হয় তা জানলে আপনার বুঝতে সহজ হবে গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কোন সমস্যা হবে কিনা।

বীর্য ভিতরে গেলে কি হয়?

অনেকেই ভাবেন যে, সেক্সের সময় বের হওয়া শুক্রাণু তাদের গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি করবে বা সেক্সের মাধ্যমে গর্ভের বেবির ক্ষতি হবে। ২০১৪ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রায় ৮০% পুরুষ মানুষ তার স্ত্রীর গর্ভ ধারণের সময় সেক্স করা থেকে বিরত থাকে। সে ভাবে যে, প্রেগন্যান্সির সময় সেক্স করলে তার বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলেও তা জরায়ুর ভিতরে আর যেতে পারে না। আরণ তখন জরায়ু একটা আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে যাকে আমরা বলি অমরা বা প্লাসেন্টা। অমরার জন্য বীর্য জরায়ুর ভিতর ঢুকতে বাধা পায়। গর্ভাবস্থায় কোন পুরুষ যদি যোনির ভিতর বীর্য ফেলে তাহলে তা কোন ক্ষতি করে থাকে না। আর সাধারণত সেই বীর্য যোনি পথ দিয়ে আবার বের হয়ে যায়। মেয়েদের যোনি কালো হওয়ার কারণ

যখন কোন মহিলা গর্ভবতী হয় তখন তার জরায়ুতে প্লাসেন্টা বা অমরা, এমনিওটিক থলি এবং মিউকাস মেমব্রেন তৈরি হয়। মিউকার মেমব্রেনের কাজ হলো বাচ্চা যেনো জরায়ুর দেয়ালের সাথে ঘষা না খায়। অমরা এবং মিউকাস মেমব্রেন যোনি পথে কোন কিছু জরায়ুতে আসতে বাধা দেয়। সুতরাং আপনি যখন কোন সেক্স করেন তখন বীর্য ছাড়াও পুরুষের লিঙ্গ বা নুনু যাতে করে জরায়ুর কাছে না আসতে পারে তার সুরক্ষা দেয় মিউকাস মেমব্রেন এবং অমরা।

গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কি প্রেগন্যান্ট হয়?

ব্যতিক্রম ছাড়া একজন গর্ভবতী মহিলা আর সন্তান ধারণ করতে পারেন না। এবং একজন মহিলা একবার গর্ভবতী হওয়ার পরেও আবার গর্ভবতী হওয়া খুবই রেয়ার। এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ জনের মত এমন হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে সুপারফিটেশন বলে। এটি বেশ কয়েকটি কারণে প্রায় অসম্ভব। ছোট যোনিতে লিংগ প্রবেশের নিয়ম কি?

প্রথমত, একজন মহিলা যখন গর্ভবতী হয় তখন তার মাসিক বন্ধ হয়ে যায় । আর মাসিক বন্ধ হওয়া মানে তার ভিতর আর নতুন করে ডিম্বাণু পরিস্ফুটন হচ্ছে না। আর নতুন ডিম্বাণু পরিস্ফুটন না হলে নতুন করে প্রেগন্যান্টও হবে না। মূলত প্রেগন্যান্ট হবার সাথে সাথেই কিছু নির্দিষ্ট হরমোনের জন্য নতুন ডিম্বাণু পরিস্ফুটন বন্ধ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, কোন কারণে একজন গর্ভবতী মহিলার ডিম্বপরিস্ফুটন হলেও শুক্রাণু সেই ডিম্বাণু পর্যন্ত যেতেই পারবে না। আর আমরা জানি গর্ভবতী হতে হলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন হতে হয়। একবার প্রেগন্যান্ট হলে, বাচ্চা ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত জরায়ুর মুখ মিউকাস মেমব্রেন থাকে। মিউকাস মেমব্রেন শুক্রাণুকে জরায়ুর ভিতরে যেতে বাধা দেয়। যদিও মিউকাস মেমব্রেনের প্রধান কাজ এটা না। মিউকাস মেমব্রেনের প্রধান কাজ হলো বাহির থেকে যোনি পথে কোন ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু যাতে করে জরায়ুর ভিতর না ঢুকতে পারে।

তৃতীয়ত, সঠিকভাবে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেকের জন্য জরায়ুতে সঠিক হরমোনের ভারসাম্য থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় এরকম হরমোনের ভারসাম্য অসম্ভব।

এই সমস্ত কারণের পরিপ্রেক্ষিতে, সুপারফেটেশন বা গর্ভ থাকা অবস্থায় আরেকটি গর্ভ ধারণ করা অত্যন্ত বিরল । সোজা ভাষায় বললে, যখনই কোন মহিলা প্রেগন্যান্ট হয়, তখনই তার দেহ “সিট খালি নাই ” এরকম একটি নোটিস দিয়ে দেয়।

গর্ভাবস্থায় সহবাসের সময় কি বীর্য ভিতরে গেলে সমস্যা হয়?

শুক্রাণু সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের এবং গর্ভের বাচ্চার জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়। এর পরেও যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন।

শুক্রাণু শুধু মাত্র সেইফ না গর্ভাবস্থায় শুক্রাণু অনেক কাজ করে থাকে। যেমনঃ

গর্ভাবস্থায় সেক্স করলে প্রসব বেদনা কম হয়। কারণ সেক্স করার সাথে সাথে আপনার যোনি অনেক ঢিলা হচ্ছে। ফলে আপনার এক্সট্রা কোন সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া সেক্সের সময় অক্সিটোসিন নামক হরমোন বের হয়। এই হরোমোন যোনিপথকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। এছাড়া শুক্রাণুতে থাকা পোস্টাগ্লান্ডিন জরায়ু মুখকে বড় করতে সাহায্য করে। তবে এমন ভাবার কারণ নাই যে, প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সেক্স করলে প্রসব বেদনা অনেক কম হবে। এটা মোটেও সত্য না। হ্যা প্রসব বেদনা হালকা কম হতে পারে আবার নাও হতে পারে।

এছাড়া সেক্সের সময় যোনিদেশে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এমনিতে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় যোনিদেশে বেশিই রক্ত চলাচল করে তবে তখন একটু বেশি রক্ত চলাচল করে। ফলে এতে বাচ্চার উপকার হয়।

খুবই সম্প্রতি প্রকাশিত একটা জার্নালে দেখছিলাম যে, আপনার স্বামীর শুক্রাণু আপনার প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুকি কমাতে সাহায্য করে। এখানে অবশ্য মনের ব্যাপার স্যাপারও আছে। তবে এটা প্রথমবার প্রেগন্যান্ট হওয়ার সময় হতে পারে। সেক্সে কিসমিসের উপকারিতা কি?

এক্ষেত্রে মনে রাখবেন যে, গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে বাচ্চা না হলেও সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা এসটিজি হতে পারে। এসটিজি এর ভিতর আছে গনেরিয়া, সিফিলিস, এইডস ইত্যাদি। সুতরাং গর্ভাবস্থায়ও সেক্স করার সময় সাবধান হতে হবে। ‘

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, গর্ভাবস্থায় পেটে বিশেষ করে তলপেটে বেশি চাপ না দেওয়া। এতে করে পেলভিক অঞ্চলে চাপ পড়ে বাচ্চার ক্ষতি হবে। এর জন্য অকাল গর্ভপাত সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা এমনকি বাচ্চা মারাও যেতে পারে।

সর্বশেষঃ গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কি হয় ?

যদি আপনি চার বা পাচ মাসের কম গর্ভবতী হন তাহলে বিনা বাধায় সেক্স করতে পারেন। কিন্তু এর বেশি সময়ের গর্ভবতী হলে আপনার সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। আমার মতে যেদিন থেকে প্রেগন্যান্ট সেদিন থেকেই সেক্সের সময় সাবধান হওয়া উচিত। কারণ সেক্সের সময় তলপেটে চাপ পড়লে বাচ্চার ক্ষতি হবে।

যদি জানতে চান গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে কি হয় তাহলে আমি বলবো বীর্য ভিতরে গেলে কিছুই হয় না। আর গর্ভাবস্থায় বীর্য ভিতরে গেলে পুনরায় গর্ভধারণের কোন সম্ভাবনাই নেই। ভিডিওসহ দুধ/ব্রেস্ট নিয়ে খেলা করা – ১০টি টিপস

গর্ভাবস্থায় অবশ্যই মহিলারা পুষ্টিকর খাবার খাবে। বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল , দুধ এবং ডিম খেতে হবে। বেশি শুয়ে না থাকাই ভালো। আর স্বামীর সাথে থাকাই ভালো। কারণ গর্ভাবস্থায় একজন মেয়ের মেন্টাল সাপোর্টের অনেক দরকার আছে।

Comments

Popular posts from this blog

জরায়ু কেটে ফেললে কি সহবাস করা যায়?

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?