লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিভাবে করে?

মেডিকেলে পড়ার সুবাদে অনেকেই আমার কাছে বলেন যে, ডাক্তার দোকানে প্রেগন্যান্সির কিট কিনতে লজ্জা লাগে। লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর উপায় কি?ঘরোয়া উপায়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার কোন উপায় আছে? তো যাদের দোকানে গিয়ে প্রেগনেন্সির কিট কিনতে লজ্জা লাগে তাদের জন্য আমি আজকে আলোচনা করবো লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর উপায় কি? সাথে মেডিকেলের দৃষ্টি কোন থেকে আলোচনা করবো লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কি সত্যিই সঠিক ফলাফল দেয় কিনা?

লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

কয়েক সেকেন্ডের জন্য আপনি চিন্তা করুন যে, আপনি প্রাচীনকালের বা ১৯০০ সালের দিকের একজন মহিলা। এখন আপনি আগের যুগের হন আর বর্তমান যুগেরই হন আপনি অবশ্যই প্রেগন্যান্ট হতে পারে। কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি আসলেই প্রেগন্যান্ট? আপনার আসলে এখন কি করা উচিত?

এখন আপনার উচিত ঘরোয়া উপায়ে কিছু উপাদান দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা। আজকে আমি আলোচনা করতেছি লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট নিয়ে। কারণ এটি ঘরোয়া উপাদান দিয়ে যে কোন সময় করা যায়। তবে শেষে আমি আলোচনা করবো যে, এটা কি সত্যিই কাজ করে কি না। শেষের অংশটুকু অবশ্যই পড়বেন।

লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট

বর্তমানে আমরা যে কাঠি পরীক্ষা করি তা আসলে নির্ভুলভাবে ফলাফল দিতে পারলেও আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দ্বারা এপ্রুভড হয়েছে ১৯৭৬ সালে। আগের দিনগুলিতে একজন মহিলা কখন গর্ভবতী তা জানার জন্য গর্ভাবস্থার যে সকল লক্ষণ থাকে সেসকল লক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতো। এসব লক্ষণের ভিতর আছে মাসিক না হওয়া, সকালের দিকে অসুস্থতা, ক্লান্তি লাগা, পেট বড় হওয়া। কিন্তু এই কাঠি পরীক্ষা করে নিমিষেই জানা যায় , কেউ প্রেগন্যান্ট হয়েছে কিনা।

বর্তমানে ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে যে, লবণ দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা সম্ভব। আর তা জেনেই বাঙ্গালি মহিলারা এর পিছনে পড়ে গেছে। আমার কাছে এমন লোকেরাও জিজ্ঞাসা করেছে যে, সে বয়ফ্রেন্ডের সাথে সেক্স করেছে। এর পর দুই সপ্তাহ ধরে তার মাসিক হচ্ছে না। আবার সে নিজেও প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনতে পারছে না। যার জন্য সে ঘরে বসে টেস্ট করতে চাচ্ছে। এখন দেখি লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিভাবে করা যায়? তবে তার আগে জানতে হবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিভাবে কাজ করে?

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিভাবে কাজ করে?

আপনি যখন গর্ভবতী হন তখন আপনার দেহে বিশাল বড় এক হরমোনাল পরিবর্তন হয়ে থাকে। মাসিকের সময় এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে জরায়ুর প্রাচীরে অমরা এবং রক্তনালী গঠিত হতে শুরু করে । একই সাথে ডিম্বাণু পরিস্ফুটনও হতে থাকে। মাসিকের তের দিনের পর থেকে ডিম্বাণু জরায়ুতে এসে শুক্রাণুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। যদি পরবর্তী ১৫ দিনের ভিতর শুক্রাণু এসে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত না করে তাহলে এস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় এবং সেই অংশটুকু ছিড়ে রক্ত আকারে যোনি পথ দিয়ে বের হয়ে আসে।

কিন্তু যখন ঐ ডিম নিষিক্ত হয়ে যায় তখন আর এস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয় না। আর জরায়ুর ভিতরের দিকে থাকা অমরা তৈরী হওয়া বন্ধ হয় না। ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণুর মিলন হওয়ার সাথে সাথেই একটা স্পেশাল হরমোন যার নাম হলো human chorionic gonadotropin বা এইচসিজি হরমোন। যদি কারো ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণুর মিলন হয় তখন থেকেই এইচসিজি হরমোন নিঃসরণ হওয়া শুরু হয়। এই হরমোন আবার প্রসাবের সাথে বের হয়। প্রেগন্যান্সি টেস্টিং কিটে এই হরমোন ডিটেক্টর থাকে। যার ফলে যদি প্রসাবের সাথে এইচসিজি হরমোন মিশে থাকে তাহলে সেই কিটে দুই দাগ হয়ে যায়। মোট কথা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন হরমোনই হলো প্রেগন্যান্সি বুঝার আসল উপায় । তবে প্রেগন্যান্সি বুঝার কনফার্মাটরি টেস্ট হলো আল্ট্রাসনোগ্রাম।

লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিভাবে করা যায়

উপরে আলোচনা করলাম যে প্রেগন্যান্সি টেস্টিং কিট কিভাবে কাজ করে? যদি অন্য কোন উপায়ে এইচসিজি হরমোন ডিটেক্ট করা সম্ভব হয় তাহলে বুঝা সম্ভব যে আপনি প্রেগন্যান্ট। অনেকে লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার কথা বলে। এখন দেখি লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিভাবে করা যায়?

লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট

প্রথমে যেটা দরকার হবে তা হলো আপনার প্রসাব। এর জন্য ছোট, পরিষ্কার এবং ছিদ্রহীন বাটি বা কাপ নিবেন। চেষ্টা করবেন যেনো সকালের প্রথম প্রসাব নিতে। কারণ সকালের প্রথম প্রসাবে এইচসিজি হরমোন বেশি থাকে।

সাথে কিছু পরিমাণে লবণ নিন। এখানে কোন ভাবেই টেস্টিং সল্ট বা হিমালয়ের সামুদ্রিক লবন বা বিট লবণ নেওয়া যাবে না। আপনাকে সাদা টেবিল সল্ট বা খাবারের লবণ ব্যবহার করতে হবে।

লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিভাবে করা যায়

প্রসাব বাটিতে নেওয়া হলে এর ভিত কিছু পরিমান বা কয়েক চামচ লবণ দিয়ে দিন। এটা অন্য ভাবে করতে পারেন।

ছোট বাটিতে এক চামচ লবণ নিয়ে এতে আপনার সকালের প্রথম প্রসাব ঢেলে দিন। এর পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। অনেকে কয়েকঘন্টা অপেক্ষা করতে বলে। তবে চার ঘন্টা থেকে পাচ ঘন্টা অপেক্ষা করাই শ্রেয়। এর ভিতর বাটিতে কোন ধাক্কা বা চামচ দিয়ে নাড়ানি দিবেন না।

লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট এর ফলাফল কিভাবে জানা যায়?

লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট
লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট

এখন আপনার পরীক্ষা করা শেষ। কিভাবে বুঝবেন যে, কোনটা নেগেটিভ আর কোনটা পজিটিভ রেজাল্ট?

যদি এমন হয় যে, আপনার সেই মিশ্রণের কাপ বা বাটিতে কোন কিছুই হয় নাই। বরং প্রসাব আরো লবণাক্ত হয়ে গেছে , কোন বুদবুদ উঠে নাই তাহলে আপনি প্রেগন্যান্ট না। অর্থাৎ ডিম্বাণু ও শুক্রাণু মিলিত হয় নাই।

কিন্তু পজিটিভ রেজাল্টের লক্ষণ কি?

বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে জানা গেছে যে, যদি আপনি প্রেগন্যান্ট হন তাহলে সেই মিশ্রণে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে। যেমন ফেনা উঠবে, অনেক ক্ষেত্রে দুধের মত সাদা হয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, পানি ঘোলা হয়ে যাবে। আর এরকম হবে প্রসাবে উপস্থিত হিউম্যান করিওনিক গোনাডোট্রপিন হরমোনের সাথে বিক্রিয়া করার কারণে।

এখন দেখি এই ফলাফল কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর ফলাফল কি সত্য?

লবণ দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আমি এখনো খুজে পাই নাই। এমনকি আমাদের কোন ডাক্তারও একে সমর্থন করেন না। একই সাথে এটি আমেরিকান ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনেস্ট্রেটর থেকে অনুমোদনও নাই। এইচসিজি হরমোন লবণের সাথে কি ধরণের বিক্রিয়া করবে তারও কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা নাই। একই সাথে এউ ধারণা সমর্থন করে এমন কোন গবেষণাও নাই। তবে হতাশ হওয়ার কারণ নাই। আপনি একে মজাদার এক সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে করতে পারেন। হতে পারে আপনি সঠিক ফলাফল পেতেও পারেন।

বাস্তবে এই পরীক্ষা করেছে , এমন কাউকে খুজে পাওয়া অনেক টাফ। তবে এক পরিচিত আপু , তার স্বামীকে নিয়ে এই পরীক্ষা করেছিলেন।

ঐ আপু এবং তার স্বামী দুই জনেই এই পরীক্ষা করেছিলেন মজার ছলে। তারা তাদের প্রসাবের ভিতর লবণ ঢেলে প্রায় ৬ ঘন্টার মত রেখে দেন। ছয় ঘন্টা পর দেখা যায় যে, তাদের দুইজনের ক্ষেত্রেই পজেটিভ আসছে। অর্থাৎ তাদের দুইজনের প্রসাবই ফেনা এবং সাদা হয় গেছে। এখন আপনিই বলেন যে, সে এবং তার স্বামী দুই জনেই কি প্রগন্যান্ট? অবশ্যই না।

সর্বশেষঃ লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট

যদি আপনার মনে হয় যে, লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে আপনার ফলাফল সঠিক আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। এর জন্য সঠিক ফলাফল পেতে বাজার থেকে একটা কাঠি কিনে আনুন। এর দামও বেশি না। মাত্র ৪০ টাকা। এছাড়া অন্য কোন সমস্যা হলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। যদি ইমারজেন্সি সাহায্য লাগে তাহলে আমাকে নক দিতে পারেন। আমি ফ্রিতে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। নিচে আমার ফেসবুক আইডি দেওয়া আছে।

Comments

Popular posts from this blog

জরায়ু কেটে ফেললে কি সহবাস করা যায়?

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?