টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম?

আমি যখন প্রথমে টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম জানি তখন বেশ ভাল রকমই অবাক হয়েছিলাম। আমি এতদিন জানতাম যে, প্রেগনেন্সি টেস্ট করার জন্য বাজারে পাওয়া প্রেগন্যান্সি টেস্টিং কিটই একমাত্র সমাধান। কিন্তু এটা জানার পর আমার টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট আসলেই সম্ভব কিনা তা জানার চেষ্টা করি। আজকে আমি টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম,টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা আসলেই নির্ভরযোগ্য কিনা, টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে কি না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

আমরা বেশিরভাগ লোকই জানি যে, বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব, খাবারে গন্ধ লাগা , ক্লান্তি ইত্যাদি গর্ভধারণের লক্ষন। যদি এমন হয় তাহলে অনেকেই বাজার থেকে প্রেগনেন্সি টেস্টিং কিট কিনে এনে টেস্ট করে দেখে থাকেন।

তবে অনেক ক্ষেত্রে , কেউ কেউ লজ্জায় বা ভয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্টিং কিট কিনতে পারেন না। তখন তারা ঘরোয়া উপায় প্রগনেন্সি বুঝার সাহায্য নেন। আর ঘরোয়া উপায়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার কথা যখন মনে আসে তখন সবার আগে মনে আসে লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার। কারণ লবণ সবার ঘরেই থাকে। এর পর আসে টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার কথা। লবণ , টুথপেস্ট সবার ঘরেই থাকে। আর যদি কোন খরচ না করতে চান বা কেনাকাটা না করতে চান তাহলে এই পদ্ধতি অনেক উপকারি। আর বাজারে কেনাকাটা করতে গেলে যদি একবার সবাই জেনে যায় তাহলে গুজব ছড়ানোর জন্য প্রতিবেশীরাই যথেষ্ট।

আজকে আমি আলোচনা করবো টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম।

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিভাবে করে?

ঘরোয়া উপায়ে টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা খুবই দ্রুত এবং সহজে করা যায়। এর জন্য কোন প্রস্তুতি দরকার হয় না। এর জন্য আপনার শুধু মাত্র তিনটি জিনিস দরকার হবে। একটা টুথপেস্ট, একটি বাটি এবং আপনার প্রসাব। অনেকে সাদা টুথপেস্ট ব্যবহার করতে বলেন। এতে নাকি রেজাল্ট বুঝা যায় তাড়াতাড়ি। আর চেষ্টা করবেন সকালের প্রথম প্রসাব নিতে। কারণ এতে করে প্রসাবে হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে। যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকেন তাহলে সকালের প্রসাব দিয়ে টেস্ট করলে সহজেই ফলাফল পাওয়া যায়।

একটা বাটিতে প্রসাব নিয়ে তার ভিতর কিছু পরিমাণ টুথপেস্ট নিন। এর পর প্রসাব আর টুথপেস্ট ভাল করে মিক্স করবেন। তবে খেয়াল রাখবেন যাতে করে ফেনা না উঠে। ব্যস, কাজ অর্ধেক শেষ। এখন কিছুক্ষন দেরি করুন যাতে করে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।

  • আমরা দাত মাজার জন্য যে টুথপেস্ট ব্যবহার করি, রেগুলার টুথপেস্ট নেয়ার চেষ্টা করবেন। এখানে কোন ব্রান্ড ম্যাটার করে না। আর পাত্রে একটু বেশি পরিমাণে পেস্ট নিতে চেষ্টা করবেন।
  • প্রথমেই প্রসাব আর পেস্ট একসাথে মিলাবেন না। প্রথমে প্রসাব আলাদা কাপে নিবেন।
  • এর পর আস্তে আস্তে প্রসাব, পেস্টের কাপের ভিতর ঢালবেন এবং মিক্স করবেন। তবে ফেনা যেন না হয় সেদিন খেয়াল রাখবেন।
  • বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন ফলাফলের জন্য।

যারা এই ঘরোয়া উপায়ে টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পরামর্শ দেন তারা বলেন যে, টুথপেস্টের সাথে প্রসাব মিশানোর ফলে এমন একটি বিক্রিয়া ঘটবে যার ফলে আপনি বুঝবেন যে আপনি গর্ভবতী।

আবার তারা বলেন যে, এই টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পদ্ধতি এমন ভাবে কাজ করে যা কিনা প্রেগন্যান্সি টেস্টিং কিট কাজ করে। অর্থাৎ এটি নাকি প্রসাবে হরমোন শনাক্ত করতে পারে।

একজন মহিলা যখন গর্ভ ধারণ করে তখন তার দেহে হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন বা এইচসিজি হরমোন তৈরী হয়। এইচসিজি হরমোন গর্ভবতী মহিলার প্রসাব এবং রক্তে পাওয়া যায়। বমি বমি ভাব, সকালের দিকে অনেক ক্লান্ত থাকা ইত্যাদি সমস্যার জন্য দায়ী এইচসিজি হরমোন।

তবে টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট আসলেই সঠিক কাজ করে কিনা তা আমরা জেনে নিই। টুথপেস্ট প্রসাবে হরমোন শনাক্ত করার কথা থাকলেও তা কিন্তু সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে না। টুথপেস্ট এবং প্রসাবের সংমিশ্রণ কোন বিক্রিয়া করলে তার মূল কারণ হলো টুথপেস্ট হলো ক্ষার এবং প্রসাব হল এসিডিক বা অম্লীয়। আর আমরা সবাই জানি যে, ক্ষার এবং এসিডের বিক্রিয়া হয়ে সেখানে বুদবুদ সৃষ্টি হয়। সুতরাং প্রসাবে এইচসিজি হরমোনের জন্য কোন বিক্রিয়া হয় না।

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পজেটিভ রেজাল্ট কেমন দেখাবে?

যারা এই টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তারা বলেছেন যে, প্রসাব এবং টুথপেস্ট মিশালে আপনার মিশ্রণের বর্ণ পরিবর্তন হবে, বা বুদবুদ আকারে গ্যাস উঠবে। অর্থাৎ এটা নাকি এইচসিজি হরমোনের সাথে টুথপেস্টের বিক্রিয়া নিশ্চিত করে।

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নেগেটিভ রেজাল্ট কেমন দেখাবে?

আপনি যদি গর্ভবতী না হন তাহলে আপনার শরীরে এইচসিজি হরমোন উৎপাদন করবে না। এর ফলে প্রসাব আর টুথপেস্ট একসাথে মিলালেও কোন বিক্রিয়া হবে না। ফলে মিশ্রণের রঙ একই থাকবে। কোন রঙের পরিবর্তন হবে না।

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট কতটুকু সঠিক?

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট কখনই সঠিক হতে পারে না আর এটি গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করার কোন নির্ভরযোগ্য উপায়ও না।

টুথপেস্ট যে মহিলাদের প্রসাবে এইচসজি হরমোন শনাক্ত করতে পারে এমন কোন প্রমান নেই। আবার টুথপেস্ট এবং প্রসাবের মিশ্রণ থেকে অনেক সময় যে বুদবুদ এবং অন্যান্য প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে তা মূলত হয় প্রসাবের এসিডীয় বৈশিষ্ঠের জন্য।

গর্ভবতী মহিলা হোক আর না হোক, নারী বা পুরুষ হোক না কেন, সবার প্রসাবে ইউরিক এসিড থাকে। আর টুথপেস্ট এর অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এরা বিক্রিয়া করে প্রশমন বিক্রিয়া করে। যার ফলে ফেনা হয়, বুদবুদ হয়।

সুতরাং যদি টুথপেস্ট এবং প্রসাব মিশ্রণ করলে বুদবুদ হয় তাহলে এটা প্রসাবের ইউরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়ার ফল হতে পারে। তবে সত্য কথা হলো পুরুষ এবং অগর্ভবতী মহিলাসহ সবার প্রসাব দিয়ে এই টেস্ট করলে একই ফলাফল আসতে পারে।

আর যদি এমন হয় যে, টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার ফলে ফেনা কম হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার প্রসাবে ইউরিক এসিড কম আছে এবং আপনি শাকসবজী এবং ফলমূল বেশি খেয়েছেন।

সর্বশেষঃ টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

যদিও ঘরোয়া উপায়ে টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে চান তাহলে একে সঠিক ভাবার কারণ নাই। তবে একে মজার পরীক্ষা হিসেবে নিতে পারেন। আর একে সঠিকভাবার কোন অবকাশ নাই। এই টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট দিয়ে আপনি প্রেগন্যান্ট ভাবার কারণ নাই। যদি কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে কমেন্ট করতে পারেন।

Comments

Popular posts from this blog

জরায়ু কেটে ফেললে কি সহবাস করা যায়?

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে?