Sgpt এসজিপিটি কমানোর উপায় কি?
আমার কাছে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন যে এসজিপিটি কমানোর উপায় বা Sgpt কমানোর উপায় কি? আসলে Sgpt কমানোর সাথে লিভারের সরাসরি সম্পর্ক আছে। আজকে দেখবো যে, এসজিপিটি কমানোর উপায় কি? লিভারে সুস্থতা সহজেই অনুমান করা যায় রক্ত এসজিপিটি কতটুকু আছে তার লেভেল দেখে।
এসজিপিটি কমানোর উপায় কি?
লিভার আমাদের দেহের একটা খনি বা স্টোর হাউজ হিসেবে কাজ করে। লিভার এমন একটি অঙ্গ যা কিনা একাধারে খাবার হজম, বিপাক, ডিটক্সিফিকেশন বা টক্সিন নিষ্ক্রিয়করণ, খাদ্য সঞ্চয় এবং প্রোটিন সংশ্লেষণের সাথে জড়িত। এছাড়া লিভার আরো অনেক কাজ করে। তবে এগুলো লিভারের প্রধান কাজ।কারো লিভার যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে খাবার ঠিক মত পরিপাক হবে না, হরমোণ নিঃসরণ হবে না এবং এক সময় পুরো শরীর হলুদ হয়ে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হবে। এর জন্য লিভারের স্বাস্থ্য কেমন তা জানার জন্য এসজিপিটি টেস্ট করতে হয়। এখন আমরা দেখবো এসজিপিটি কমানোর উপায় কি? Sgpt কমানোর উপায় কি?
এসজিপিটি কমানোর উপায় কি এটা জানার আগে আমাদের জানতে হবে এসজিপিটি আসলে কি এবং এসজিপিটি এর কাজ কি? এসজিপিটি কখন কোথায় উৎপাদন হয়? এসব বিষয় জানলেই আমরা বুঝতে পারবো এসজিপিটি কমানোর উপায় কি?
এসজিপিটি কি ?
এসজিপিটি বা SGPT হলো একটি লিভারের এনজাইম। এসজিপিটি এর পূর্ণরূপ হলো সিরাম গ্লুটামিক পাইরুভিক ট্রান্সএমাইনেজ।এসজিপিটি এক ধরণের প্রোটিন বলা যায়। সাধারণত লিভারের কোষগুলো এসজিপিটি তৈরী করে এবং তারাই এটা ব্যবহার করে। সাধারণত পেশি কোষ বা লিভারের বাহিরে এর পরিমান খুবই কম থাকে। তবে যখন লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা লিভারের কোন সমস্যা হয় তখন লিভার অতিরিক্ত পরিমাণে এসজিপিটি উৎপাদন করে এবং অতিরিক্ত পরিমান এসজিপিটি রক্তে চলে আসে। এর ফলে বুঝা যায় যে, লিভারে কোন সমস্যা হয়েছে। রক্তের প্রতি লিটার সিরামে সাধারণত ৭ থেকে ৫৬ ইউনিট এসজিপিটি থাকে। এর বেশি হলেই সমস্যা হয়।

এসজিপিটি বাড়ে কেন?
বেশ কিছু কারণে এসজিপিটি বেড়ে যেতে পারে। যেমন যদি কেউ অনেক বেশি এলকোহল জাতীয় পানীয় খায় তাহলে তার এসজিপিটি মাত্রা বেড়ে যাবে। কারণ এলকোহলের অক্সাইল গ্রুপের সাথে লিভারের কোষগুলো বিক্রিয়া করে ফেলে। এর জন্য লিভারের কোষের ক্ষতি হয় এবং লিভারের থেকে এসজিপিটি রক্তে এসে পড়ে। ভাইরাল হেপাটাইটিস এ এবং বি তে এসজিপিটি বেড়ে যায়। এর জন্য জন্ডিস হলে শরীর হলুন হয়ে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত মোটা হওয়া, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস, সিলিয়াক ডিজিজ, কিডনির রোগ, হেপাটাইটিস সি, গলব্লাডার প্রদাহ, পেশিতে আঘাত, প্যানক্রিয়াটাইটিস ইত্যাদি কারণে এসজিপিটি বেড়ে যেতে পারে।
এসজিপিটি কমানোর উপায় কি?
এসজিপিটি কমানোর উপায় হলো খাদ্যাভাস এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। এখানে আমি এসজিপিটি কমানোর উপায় দুটি খাদ্যাভাস এবং জীবনধারায় পরিবর্তন বিষয় আলোচনা করতেছি।
খাদ্যতালিকা বা ডায়েটে পরিবর্তন এসজিপিটি কমানোর উপায়
আপনি কি খাচ্ছেন সে সম্পর্কে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। এর জন্য আপনাকে সুস্বাস্থ্য ডায়েট ফলো করতে হবে। আপনাকে এমন ডায়েট ফলো করতে হবে যেনো তাতে আপনার লিভারের কোন ক্ষতি না হয় ।
- ডিম, কমলালেবু, সয়া মিল্ক, দুগ্ধজাতীয় দ্রব্য, লিভার কয়েল, শাক সবজী, মাশরুম ইত্যাদি খেতে হবে। এতে করে আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বাড়বে এবং এর জন্য লো ডেনসিটি কোলেস্টেরল তৈরী হবে।
- পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং অর্গানিক এবং গাছের ফলমূল খেতে চেষ্টা করুন।
- সব সময় লবণ এবং সোডিয়াম জাতীয় খাবার পরিহার করে চলবেন।
- লিভারে প্রতিনিয়ত অক্সিডেন্ট তৈরী হয়। এর জন্য আপনাকে এমন খাবার খেতে হবে যাতে করে সে অক্সিডেন্ট শরীরের কোন ক্ষতি না করতে পারে। এর জন্য টক জাতীয় খাবার খাবেন। টক জাতীয় ফলে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। এর জন্য টক জাতীয় ফল লিভারের জন্য উপকারী।
- রঙিন শাকসবজী এবং রঙিন ফলমূল খেতে হবে। এতেও বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
- তেলযুক্ত, বেশি ভাজা, প্রসেসড বা প্রক্রিয়াজাত এবং জাংক ফুড খাওয়া যাবে না। কোমল পানীয়ও খাওয়া যাবে না। বার্গার, হট ডগ, পিজ্জা এরকম রিচ ফুড খাওয়া যাবেই না।
- কখনোই বেশি বুঝে অনলাইন থেকে দেখে ঔষুধ খাবেন না। কারণ লিভারের প্রায় ১৪০ টির উপর রোগ আছে। আপনার কোন রোগ হয়েছে তা একমাত্র এমবিবিএস ডাক্তারই ব্ বলতে পারবে। এর জন্য ডাক্তারের কাছে যান। তবে অনলাইন থেকে দেখে ঔষুধ খেলে ডাক্তারেরই লাভ। এতে করে বেশি অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন। তখন টাকার জন্য চোখে সর্ষে ফুল দেখবেন।
জীবনধারা পরিবর্তন Sgpt কমানোর উপায়
জীবনধারা পরিবর্তন এসজিপিটি কমানোর জন্য আপনাকে বেশ কিছু পদ্ধতি ফলো করতে হবে। এগুলো সঠিকভাবে মেন্টেন করতে পারলে আপনার বেশ এসজিপিটি কমানোর উপায়।
- রক্তের এসজিপিটি কমানোর জন্য প্রথমেই আপনাকে এলকোহল যুক্ত পানী খাওয়া কমাইতে হবে। স্প্রিড, টাইগার এসব এলকোহলিক পানি খাওয়া যাবেই না। আর মাদক তো একেবারেই না।
- ধুমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ ধুমপানের কারনে আপনার লিভারের অনেক বিক্রিয়াতে সমস্যা হয়।
- ধুমপান ত্যাগ করার পাশাপাশি আপনার প্যাসিভ স্পোকিংও করা যাবে না। প্যাসিভ স্পোকিং হলো আপনি সরাসরি ধুমপান করেন না কিন্তু আপনার পাশে কেউ সিগারেট খাওয়ার ফলে ধুয়া যদি আপনার দেহের ভিতর প্রবেশ করেন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। যেমন সকালে জগিং, দ্রুত হাটা, সাতারের মতো সাধারণ ব্যায়াম করতে পারেন। এতে শরীরের চর্বি করে যাবে। আর চর্বি বাড়লেই লিভারের ক্ষতি হয়। একে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।
- ক্ষতিকারক ক্যামিকেল এড়িয়ে চলুন।
রক্তে এসজিপিটি কমানোর উপায় কি?
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সমসময়েই উত্তম। লিভারের সমস্যা এবং এসজিপিটি মাত্রা বাড়লে সব সময় কোন লক্ষন দেখাবে না। এর জন্য আপনার প্রতি ৬ মাস পর পর টেস্ট করা উচিত।
তবে আমি যেমন আগে বলেছি যে, এসজিপিটি কমানোর উপায় হলো ভিটামিন ডি খাওয়া। কারণ ভিটামিন ডি শরীরের পক্ষে ভালো কোলেস্টেরল তৈরী করতে সহায়তা করে। এর জন্য প্রতিদিন অন্তত একটা হলেও রঙিন ফলমুল খাওয়ার ট্রাই করবেন। কড লিভার, ক্যাভিয়ার দুধ ডিম ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস। এতটুকু শিউর হবেন যে, আপনি যা খাচ্ছেন তাতে যেন রঙের ভ্যারাইটি থাকে। যেমন ফুলকপি, ব্রকলি, বাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন। লাল শাক খেতে পারেন। কমলা অনেক ভালো এন্টি অক্সিডেন্টের।
খাবারে এমন কোন আইটেম রাখবেন না যা কিনা অতিরিক্ত ফ্যাট তৈরি করে। যেমন গরুর মাংশ, ছাগলের মাংশসহ সকল লাল মাংশ খাওয়া যাবে না। লাল মাংশ রক্তে অতিরিক্ত চর্বি প্রবেশ করায়। রিচ ফুডও খাওয়া যাবে না। রিচ ফুডের ভিতর আছে লাল মাংশ, প্রসেসড ফুড, নারিকেলের তেন, বাটার, চিজ, সসেজ, জাংক ফুড এবং সফট ড্রিংকস। এগুলা খাওয়া যাবে না। আর নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এগুলোই হলো এসজিপিটি কমানোর উপায়।
সর্বশেষঃ এসজিপিটি কমানোর উপায়
তো আজকে আমি আলোচনা করলাম যে, এসজিপিটি কমানোর উপায় কি , Sgpt কমানোর উপায় কি, এসজিপিটি কেন বাড়ে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। আশা করি উপকার হয়েছে আপনার। যদি কোন জিজ্ঞাসা থাকে আমাকে ফেসবুকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। নিচে আমার ফেসবুকের লিংক দিয়ে দিয়েছি।
Comments
Post a Comment