মাসিকের রক্ত কম যায় কেনো? মাসিকের রক্ত কম হলে করনীয়?

মাসিকের রক্ত কম যায় কিনা এইটা বুঝার আগে আপনার বুঝতে হবে আপনার জন্য নরমাল পিরিয়ড আসলে কি। মাসিক বা পিরিয়ড তখনই হয় যখন জরায়ুর ভিতরের আস্তরণ প্রতি মাসে বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর জরায়ুমুখ বা সারভিক্স ও যোনির ভিতর দিয়ে বাহিরে বের হয়।

সাধারনত পিরিয়ড দিন সংখ্যা ও রক্ত প্রবাহের উপর নির্ভর করে। সাধারণত মহিলাদের প্রতি ২১ থেকে ৩৫ দিন অন্তর অন্তর পিরিয়ড হয়। পিরিয়ড দুই থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।যাই হোক, বিভিন্ন সময় আপনার পিরিয়ড নাও হতে পারে। যেমন আপনি যখন গর্ভাবস্থায় থাকবেন তখন আপনার পিরিয়ড হবে না কারণ তখন জরায়ুর ভিতরের যে স্তর তৈরি হয় তা নষ্ট হয়ে যায় না। masiker rokto kom zay keno

প্রতিটা মহিলার মাসিক আলাদা আলদাভাবে হয়। আপনার পিরিয়ড সাধারণ নিয়ম অনুসারে হতে পারে আবার দেরি করেও আসতে পারে।

আজকে আমরা আলোচনা করবো, পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং কম যাওয়ার কারন কি, মাসিকের সময় রক্ত কম গেলে কি সমস্যা হয় এবং পিরিয়ডের সময় কম রক্ত গেলে করণীয় কি এসব বিষয় নিয়ে ।

masiker somoy rokto kom zay keno

পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং কম যাওয়ার কারণ কি?

আপনার আগে বুঝতে হবে কি কি লক্ষণ থাকলে পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং কম হয়েছে বুঝা যাবে।

  • দুই দিনের থেকে কম সময় ধরে ব্লিডিং হবে
  • সাদা স্রাব হবে ও সাথে হালকা ছোপ ছোপ রক্ত থাকবে
  • আপনি এক বা একাধিকবার রেগুলার মাসিকের ডেট মিস করবেন।
  • আপনার পিরিয়ড সাইকেলে আপনি বেশি হালকা মাসিক বা সাদা স্রাব হতে দেখবেন

মনে রাখবেন আপনার পিরিয়ডের ডেট কোন কারণ ছাড়াই মিস হতে পারে। কিন্তু বার বার পিরিয়ডের ডেট মিস হতে থাকলে আপনার অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। তারা বুঝতে পারবেন যে, আপনার মাসিকের সমস্যা হয়েছে নাকি আপনার ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হয়েছে। masiker rokto kom gele koroniyo ki

মাসিকের সময় কম রক্ত যাওয়ার কারণ অনেক কিছু হতে পারে। যেমনঃ

বয়স হলে মাসিকের রক্ত কম যায়

বয়সের সাথে সাথে পিরিয়ডের দিন সংখ্যা ও ব্লাড ফ্লো কমতে পারে। কারো টিনএজ বা কৈশোরে যে পরিমান রক্ত যেত, বয়স বাড়লে অবশ্যই তার থেকে কম রক্ত যাবে। আর আপনি যদি মেনোপজ দশার দিকে যেতে থাকেন বা আপনার বয়স যদি ৪০ থেকে ৪৫ বছরের বেশি হয়, তাহলেও আপনার মাসিকের সময় কম রক্ত যেতে পারে। তবে এমন হলে, মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক বেশি হতে দেখা যায়। এসব হয় একমাত্র হরমোনের ভারসাম্য হওয়ার জন্য। মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

খাদ্যাভাস এবং শরীরের ওজন এর জন্য মাসিকের রক্ত কম যায়

আপনার শরীরের ওজন ও শরীরের চর্বি আপনার মাসিক চক্রকে ইফেক্ট করতে পারে। আবার আপনার শরীরের ওজন অতিরিক্ত কম হলেও আপনার মাসিকের সময় কম রক্ত যেতে পারে। শরীরের ওজন অতিরিক্ত কম বা অতিরিক্ত বেশি হলে দেহের হরমোনগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আবার একমাসে যদি শরীরে অতিরিক্ত ওজন আসে বা অতিরিক্ত ওজন ক্ষয় হয় তাহলেও আপনার মাসিকের সময় হালকা রক্ত যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় মাসিকের রক্ত কম যায়

গর্ভাবস্থায় এমনিতেই মাসিক হবার চান্স অনেক কম। তখন হয়ত আপনার রক্তপাত বা স্রাব হতে পারে। তখন হালকা রক্তপাত হতে পারে যা কিনা মাসিকের মত মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে সেটি মাসিক না। কারণ এটি ইমপ্লান্টেশনের রক্তপাত হতে পারে। যখন একটা নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর দেয়াল বা ফেলোপিয়ান টিউবে বসে যায় তখন এরকম রক্তপাত হতে পারে। এই রক্তপাত সাধারণত দুই দিন বা তার কম সময় ধরে থাকে। দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ কি?

ব্রেস্ট ফিডিং বা বাচ্চাদের দুধপানের সময় মাসিকের রক্ত কম যায়

বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর পরই আপনার পিরিয়ড না আসতে পারে। দুধ উৎপাদনের জন্য যে হরমোন দরকার হয় তা ডিম্বস্ফোটন প্রতিরোধ করে আর এতে পিরিয়ড দেরি করে হতে পারে। আর যদি আপনি বুকের দুধ খাওয়ান তাহলে আপনার মাসিক বাচ্চা জন্মের কয়েক মাস পরে হতে পারে।

ধরেন আপনি বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এবং এবং আপনার যদি এখনো মাসিক না হয়ে থাকে তাহলে তখনো কিন্তু আপনি গর্ভবতী হতে পারেন। কারণ আপনার প্রথম বাচ্চার ডেলিভারির পর দুই সপ্তাহ র ভিতর আপনার নতুন একটি ডিম্বানূ পরিস্ফুটন হবে। তখন আপনি মিলন করলে আপনার গর্ভবতী হওয়ার চান্স অনেক বেশি। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনি যদি অনিরাপদ যৌন মিলন করেন তাহলেও আপনি গর্ভবতী হতে পারেন।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করলে মাসিকের রক্ত কম হয়

হরমোনাল জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি মাসিকের সময় কম রক্ত আসার কারণ হতে পারে। কিছু কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জরায়ুতে ডিম্বাণু পরিস্ফুটনে বাধা দেয়। এই পদ্ধতিগুলা বিভিন্নভাবে কাজ করে-

  • পিল
  • প্যাচ
  • রিং
  • শট

যখন আপনার শরীর কোন ডিম জরায়ুতে পাঠায় না, তখন আপনার জরায়ুর ভিতরের স্তরে কোন স্তর সৃষ্টি করে না। এরজন্য মাসিকের সময় কম রক্ত যায়। বা অনেক সময় পিরিয়ডের ডেট মিস যায়।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করলে আপনার মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

মানসিক চাপ হলে মাসিকের রক্ত কম হয়

যদি আপনি মানসিক চাপের ভিতর থাকেন তাহলে আপনার ব্রেইন আপনার মাসিক চক্রের জন্য যে হরমোন থাকে তা কম বা বেশি নিঃসরণ করে। এর জন্য মাসিকের সময় হালকা বা বেশি রক্ত যেতে পারে। যখন মানসিক চাপ করে নরমান অবস্থায় আসবে তখন আবার সব আগের মত হয়ে যাবে।

অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে মাসিকের রক্ত কম হয়

যেসকল মহিলারা অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন তাদের মাসিকের ডেট চেঞ্জ সহ পিরিয়ডের সময় কম রক্ত যেতে পারে। যেহেতু ব্যায়ামের জন্য শরীরের অনেক পরিশ্রম হয় তাই এর জন্য পিরিয়ডে অনেক সমস্যা যেমন নিয়মিত পিরিয়ড দেখা দিতে পারে।

ইটিং ডিসওর্ডার হলে মাসিকের রক্ত কম হয়

এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা এবং বুলিমিয়া হলে অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দিতে পারে। ইটিং ডিসওর্ডার হলে শরীরের ওজন কমে যায় যার জন্য হরমোনাল ইমব্যালান্স দেখা দিতে পারে।

পলিসাইটিক ওভারি সিন্ড্রোম( PCOS) হলে মাসিকের রক্ত কম হয়

যদি এমন হয় যে আপনার কয়েকবছর ধরে অনিয়মিত মাসিক হয় বা মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ধরে নিতে পারেন এটা পলিসাইটিক অভারি সিন্ড্রোম। এর জন্য আপনার শরীরের কিছু হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয় যার জন্য আপনার ডিম পরিপক্ক হওয়া বন্ধ করে দেয়। এর লক্ষনগুলো হলঃ

  • শরীরের ওজন বাড়া এবং স্থুলতা দেখা দেয়া
  • ব্রণ হবে
  • মুখ মন্ডলে লোম হবে / ফেসিয়াল হেয়ার হবে
  • ডিম পরিপক্ক হবে না যার জন্য বাচ্চা জন্মদানের ক্ষমতা হারাবে

PCOS নির্ণয়ের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয় তাই ডাক্তার আপনার পেটের নিচের অংশের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে দিবেন। PCOS এর জন্য জরায়ুতে সিস্ট বা গোটা গোটা দেখা যায়। যদি এরকম আসলেই হয় তাহলে ডাক্তার আপনাকে আপনার ওজন কমাতে বলবেন এবং কিছু জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খেতে বলবেন । এতে আপনার পিরিয়ড নরমাল হয়ে যাবে।

আমরা ডাক্তাররা সাধারণত এরকম হলে মেটফরমিন গ্রুপের ঔষুধ দেই যা কিনা টাইপ ২ এর ডায়াবেটিস এর জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ডায়াবেটিসের জন্য এই ঔষুধ ব্যবহারের কারণ হল এই ঔষুধ ইনসুলিন লেভেল কমাতে সাহায্য করে এবং ডিম্বপাত দূর করতে সাহায্য করে । যার জন্য আপনার মাসিক আবার আগে মত হয়ে যেতে পারে।

অফলেভেল ঔষুধ ব্যবহার করা মাসিকের রক্ত কম যাওয়ায় করনীয়

ডাক্তাররা এক্ষেত্রে কিছু অফলেভেল ঔষুধ ব্যবহার করতে পারেন। অফলেভেল ঔষূধ হল সে সকল ঔষুধ যা কিনা একটা নির্দিষ্ট রোগের জন্য FDA কর্তৃক অনুমোদন দেয়াহয়েছে। কিন্তু অন্য ভিন্ন কোন রোগের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়নাই। এক্ষেত্রে অফ লেভেল মেডিসিন দিলে সমস্যার কারণ নাই। কারণ FDA সবসময় বলে অফ লেভেল মেডিসিন টেস্ট করার জন্য বল।

আমরা যারা এমবিবিএস পাস করি তাদের মেডিসিন এবং ক্লিনিক্যাল মেডিসিন নিইয়ে প্রচুর পড়তে হয়। সুতরাং ডাক্তার যেটা ভাল মনে করেন সেই মেডিসিনই প্রেসক্রাইব করবেন।

মাসিকের সময় কম রক্ত যাওয়ার কারণে সিরিয়াস মেডিক্যাল কন্ডিশন

হটাত করে মাসিক বা অনিয়মিত মাসিক কোন বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। রেগুলার পিরিয়ড হলে বুঝতে হবে আপনার শরীর ভাল মত কাজ করছে। মাসিকের সময় কম রক্ত যাওয়া বুঝায় আপনার শরীরে হরমোনাল ইমব্যালান্স আছে বা অন্য কোন বড় সমস্যা আছে।

পলিসাইটিক অভারি সিন্ড্রোম রোগের কারনেও অনিয়মিত মাসিক ও মাসিকের সময় কম রক্ত যেতে পারে। আপনার সিন্ড্রোম গুলো ডাক্তারের কাছে বললেই ডাক্তার বুঝতে পারবেন আপনার সমস্যা কোথায়, কেনো মাসিকের সময় কম রক্ত যায়

মাসিকের সময় কম রক্ত যাওয়ার কারণে যে সকল রিস্ক হতে পারে

মাসিকের সময় কম ব্লিডিং হওয়া যে কোন বয়সের মহিলাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হতে পারে। পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং কম যাওয়া মানে হল আপনার বডি ঠিক মত কাজ করছে না।

যেসকল মহিলাদের টানা তিন মাস ধরে মাসিক হচ্ছে না কিন্তু তারা গর্ভবতী না, তাদের এমেনোরিয়া রোগ হতে পারে।

পিরিয়ডের সময় কম রক্ত গেলে কখন ডাক্তার দেখাতে হবে?

  • যদি আপনি টানা তিন বার পিরিয়ডের ডেট মিস করেন কিন্তু আপনি গর্ভবতী না
  • আপনার কাছে মনে হচ্ছে আপনি গর্ভবতী
  • অনিয়মিত মাসিক
  • পিরিয়ডের সময় না কিন্তু আপনার ব্লিডিং হচ্ছে
  • পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়া

এছাড়া যদি অতিরিক্ত কোন কিছু চোখে পড়ে তাহলে ডাক্তারের সাথে কন্টাক্ট করুন।

মাসিকের সময় রক্ত কম গেলে চিকিৎসা

পিরিয়ডের সময় কম ব্লিডিং অনেক কারণে হতে পারে। যদি একবার হয় তাহলে এইটা নিয়ে চিন্তার কারণ নাই। কিন্তু যদি এটা বারবার হয় এবং আপনি যদি কোনো খারাপ কিছু এক্সপেরিয়েন্স করেন তাহলে এইটার জন্য ট্রিটমেন্ট লাগবেই।

আমরা ডাক্তাররা সাধারণত যতগুলো এমন কেস দেখছি বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই দেখছি তারা বিভিন্ন পিল গ্রহণ করছিলো। তবে অতিরিক্ত ওজনের জন্যও এমন হতে দেখা যায়। তবে পিরিয়ডের সময় কম ব্লিডিং বেশ কিছু ক্রনিক ডিজিজ এর লক্ষন হতে পারে। সুতরাং বার বার এরকম হলে ডাক্তার দেখানো বেস্ট হবে।

সর্বশেষঃ

যদি আপনার পিরিয়ডের সময় হালকা রক্ত যায় তাহলে আপনার চিন্তিত হওয়ার কারণ নাই। এমনকি শর্ট পিরিয়ড যেমন ৩ বা ৪ দিনের পিরিয়ড নরমাল। কিন্তু যদি আপনার পিরিয়ডের ডেট মিস হবার পর যদি আপনার মাসিকের সময় হালকা রক্ত যায় , তাহলে এটা প্রেগন্যান্ট এর ইমপ্লান্টেশন হতে পারে । শিউর হওয়ার জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি প্রথম থেকেই আপনার মাসিকের সময় কম রক্ত যাওয়া ট্রাক করেন। অর্থাৎ মাসিকের কোন কোন দিন গুলোতে কম রক্ত যাচ্ছে এসব যদি আপনি ট্রাক করে বা খাতায় লিখে রাখতে পারেন ও পরে ডাক্তারকে দেখাতে পারেন এইটা সবচেয়ে ভাল হয় ।

মাসিকের রক্ত কালো হয় কেন? মাসিকের রক্ত কালো হলে কি খেতে হয় ?

মেয়েদের মাসিক কিভাবে কেন হয়? ভিডিওসহ দেখুন Meyeder Masik Kivabe Keno Hoy?

পিরিয়ডের সময় চাকা চাকা রক্ত,জমাট বাধা রক্ত ও দলা রক্ত কেনো পড়ে?ক্লটিং

Comments

Popular posts from this blog

জরায়ু কেটে ফেললে কি সহবাস করা যায়?

যোনিতে লিংগ প্রবেশের নিয়ম