মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
আমাদের সবার ভিতরই একধরণের চিন্তা ভাবনা কাজ করে যে মাসিক না হলে বাচ্চা হওয়ার চান্স থাকে। একজন ডাক্তার হিসেবে আমি বলতে চাই এই কথাটা অনেকাংশে সত্য। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় মাসিক না হওয়া অনেক ক্রিটিক্যাল রোগের লক্ষন হতে পারে। যেমন জরায়ুর টিউমার। আজকে আমি আলোচনা করবো মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, কতদিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয়, মাসিক না হলে কি প্রেগন্যান্ট হয়, পিরিয়ড না হলে কি বাচ্চা হয়, সাদাস্রাব হলে কি বাচ্চা হওয়ার চান্স আছে এসব বিষয় নিয়ে।
মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে মাসিক কিভাবে হয় । প্রতি মাসে মেয়েদের জরায়ুতে একটি করে ডিম্বানু পরিস্ফুটনের জন্য আসে। জরায়ু সেই ডিম্বাণু পরিস্ফুটনের সাথে সাথে ডিম্বানূ নিষিক্ত হওয়ার জন্য জরায়ুর ভিতরের স্তরে একটা আস্তরণ তৈরী করে। যদি কোন কারণে ঐ মাসে ডিম্বাণ্নু নিষিক্ত না হয়, তাহলে জরায়ুর ঐ ভিতরের আস্তরণ ছিড়ে যোনীপথে বের হয়ে আসে যাকে বলা হয় মাসিক। দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ কি?
এখন যদি এমন হয় যে আপনার জরায়ুর ভিতরের আস্তরণ তৈরি হয় নাই বা ছিড়ে নাই তখন আপনার মাসিক হবে না। প্রেগন্যান্ট হলে জরায়ুর ভিতরের আস্তরণ ছিড়ে না গিয়ে অমরা তৈরী হয়। তখন মাসিক হয় না।
মাসিক না হলে কি প্রেগন্যান্ট ?
আপনার মাসিক নিয়মিত না হলে আপনি হয়ত একটু চিন্তিত হতে পারেন কারণ মাসিক না হওয়া প্রেগন্যান্সির লক্ষন হতে পারে বা কোন বড় ধরণের রোগএর লক্ষন হতে পারে। মাসিক না হওয়া প্রেগন্যান্সির একটি বড় লক্ষন হিসেবে ধরা হয়।
অনেক মহিলার ক্ষেত্রে মাসিক চক্রে কিছু অসুবিধা দেখা দেয় বিভিন্ন কারণে। সাধারণত একবার মাসিক দেরি করে হওয়া বা একবার না হওয়া কোন খারাপ লক্ষন নির্দেশ করে না। কিন্তু যদি আপনার পর পর দুই মাস মাসিক না হয় বা অনেক দিন ধরে মাসিক অনিয়মিত তাহলে আপনার অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
মাসিক নিয়মিত না হওয়ার অনেক কারণ থাকলে পারে। অনেকের নিয়মিতভাবে অনিয়মিত মাসিক হয় কারণ তাদের ডিম্বাণু পরিস্ফুটন নিয়মিত হয় না ও তাদের শরীরে হরমোনাল ইমব্যালান্স এর জন্য। যদি এমন হয় যে আপনার ঘুমের প্যাটার্ন হটাত করে পরিবর্তন হয়েছে , তাহলেও আপনার মাসিক নাও হতে পারে। আপনার ওজন অনেক কমে গেলে বা বেড়ে গেলে আপনার মাসিক নাও হতে পারে। কারণ শরীরে হরমোন তৈরীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে ফ্যাটের দরকার হয়। এসব হরমোনের ভিতর আছে এন্ড্রোজেন, গোনাডোট্রপিন হরমোন। এন্ড্রোজেন হরমোন সরাসরি আপনার মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বা কমে গেলে এসব হরমোন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মাসিক হয় না।
অনেক সময় দেখা যায় স্ট্রেস বা অবসাদগ্রস্থতা বা দুশ্চিন্তা মাসিক চক্রের উপর প্রভাব ফেলায় এতে মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে যায়। যদিও সময়মত মাসিক না হওয়াটাই সবচেয়ে বড়দুশ্চিন্তার বিষয়। তবুও এসময় আপনাকে অনেক ধৈর্য ধরে থাকতে হবে এবং বেশি করে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
মাসিক না হলে করণীয় কি ?
যদি আপনি আজকে আপনার মাসিকের ডেট মিস করেন তাহলে আপনার প্রথম কাজ হল আপনাকে কিছু দিন ধৈর্য ধরা। কিছু দিন ওয়েট করে দেখুন মাসিক হয় কি না। কারণ এমনও হতে পারে যে আপনি মাসিকের দিনের ভুল হিসাব করছিলেন । তবে এমন হয় যদি যে আপনার মাসিকের ডেট অভার হয়ে ৩ দিন পার হয়ে গেছে তাহলে আমি আপনার বলবো প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে। বিবাহিত ও অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ? meyeder masik na hoyar karon ki ?
আপনি বাসায় বা ডাক্তারখানায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। যদি প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হয় তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার- আপনি প্রেগন্যান্ট। আর যদি নেগেটিভ আসে তাহলে আপনার আরো কিছু দিন ওয়েট করা উচিত। সাধারণত মাসিক ২১ তম দিন থেকে ৩৫ তম দিন এর ভিতর হতে পারে। আপনি ৩৫ তম দিন পর্যন্ত ওয়েট করা উচিত। এর পরেও না ভালো গাইনী ডাক্তার দেখানো উচিত।
যদি আপনার মাসিক মিস হয়, প্রেগন্যান্সি টেস্ট এ পজিটিভ আসে কিন্তু আপনি অবিবাহিত বা আপনি মিলন করেন নাই তাহলে বুঝতে হবে আপনার জরায়ুতে সিস্ট বা টিউমার আছে।
কিন্ত আপনি যদি সেক্স করছেন কিন্তু মাসিক হচ্ছে না আবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট নেগেটিভ আসলে আপনার কিছু দিন ধৈর্য ধরা উচিত। পরে এক সপ্তাহ পর যদি মাসিক না হয় তখন আবার প্রেগন্যান্সিটেস্ট করতে পারে। তখন আশা করি পজিটিভ আসবে।
এরপরেও কোন সমস্যা থাকলে আমাকে নক দিতে পারেন।
কতদিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয়
যেহেতু মাসিকের দিন হল ২১ তম দিন থেকে ৩৫ তম দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ গতমাসে যেদিন থেকে মাসিক শুরু হয়েছিল সেদিন হল পরবর্তী মাসিক শুরুর প্রথম দিন। ঐ দিন থেকে গণ্না শুরু করলে ২১ তম দিন থেকে ৩৫ তম দিনের ভিতর আপনার মাসিক হবে। তবে আপনি প্রেগন্যান্ট হলে এই সময়ে মাসিক হবে না। তবে নিষেক হওয়ার কিছু দিন পর অর্থাৎ ইমপ্লেন্টেশন হওয়ার সময় কিছু রক্তস্রাব হতে পারে। তখন সেটাকে মাসিক বলে ভুল করা যাবে না।
আমরা সাধারণত ৩৫তম দিন পর্যন্ত ওয়েট করতে বলি এবং এর পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে বলি। কারণ যদি প্রেগন্যান্ট হন তাহলে মাসিকের ডেটের এক বা দুই সপ্তাহের ভিতরই সব লক্ষণ দেখা দিবে। তাই বলা যায় ১৪ দিন মাসিক না হলেই গর্ভবতী বুঝা যায়।
আপনার যদি মাসিক না হয় এবং প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসে তাহলে প্রেগন্যান্সি কনফার্ম হয়ে যায়। তবে মাসিক মিস হওয়ার আগে প্রথমদিকেই আপনি কিছু লক্ষন দেখতে পাবেন। আপনার সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই আপনার অনেক ক্লান্ত লাগবে। হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য আপনার বমি বমি লাগবে। আমার দেখা মতে ৮০% মহিলারাই এমন সমস্যায় ভুগেন। গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহের ভিতরই আপনার স্তনেব্যাথা হবে এবং স্তন ফুলে যাবে। আপনার ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হবে। জ্বর না আসলেও আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেশি মনে হবে। যদি এমন হয় যে মাসিক না হওয়া সত্বেও রক্তস্রাব হচ্ছে তাহলেও সেটা প্রেগন্যান্সির কারণ হতে পারে।
এছাড়া আরো অনেক লক্ষণ আছে যা দেখে বুঝা যায় মাসিক না হলেও গর্ভবতী কি না।
সর্বশেষঃ
৯০% ক্ষেত্রে মাসিক না হলেই প্রেগন্যান্সি দেখা দেয়। অর্থাৎ যদি আপনার মাসিক না হয় তাহলে বাচ্চা হবে বা আপনি গর্ভবতী। তবে খুব কম ক্ষেত্রে জরায়ুর টিউমারের জন্য এমন হতে পারে। ডাক্তার হিসেবে এটুকু বলতে পারি, প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণের কনফার্মেটরি টেস্ট হল আল্ট্রাসনোগ্রাম। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট হল জাস্ট একটা প্রাথমিক টেস্ট।কোন পুরুষের অন্ডকোষে যদি টিউমার বা ক্যান্সার থাকে তাহলে তার প্রসাব দিয়ে কিট পরীক্ষা করলেও রেজাল্ট পজিটিভ আসবে। সেক্সে কিসমিসের উপকারিতা কি?
তো আজকে আমি আলোচনা করলাম মাসিক না হলেই কি বাচ্চা হয় কি না এই বিষয়ে । আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করতে পারেন বা আমাকে ফেসবুকে নক দিতে পারেন।
Comments
Post a Comment