পিরিয়ডের সময় চাকা চাকা রক্ত,জমাট বাধা রক্ত ও দলা রক্ত কেনো পড়ে?ক্লটিং

একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি হওয়া হল মা হওয়া। যাদের বিয়ে হইছে কিন্তু অনেক দিন ধরে সন্তানের মুখ দেখেন না তাদের কাছ থেকেই বুঝা যায় মা হওয়াটা আসলে কত বড় প্রাপ্তি। আর একটা মেয়ে মা হতে পারবে কি না সেইটা বলে দেয় তার সুস্থ ও নিয়মিত পিরিয়ড বা মাসিক। আর মেয়েদের একটা কমন সমস্যা হল পিরিয়ডের সাথে চাকা চাকা রক্ত যাওয়া, মাসিকের সাথে দলা রক্ত যাওয়া, মাসিকের সাথে জমাট রক্ত যাওয়া । আজকে আমরা আলোচনা করবো, পিরিয়ডের সাথে চাকা চাকা রক্ত যাওয়া, পিরিয়ডের সাথে দলা দলা রক্ত যাওয়া , জমাট রক্ত যাওয়ার কারণ কি, কিভাবে সমাধান করা যায় ও এসব সমস্যা কোন রোগ এর উপসর্গ এসব নিয়ে । তো চলুন শুরু করা যাক। মাসিকের সময় চাকা রক্ত যায় কেন

মাসিকের সময় চাকা রক্ত যায় কেন

মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধে কেন? masiker somoy rokto jomat badhe keno

বেশিরভাগ মহিলাই জীবনের কোনো সময়ই মাসিকের সময় জমাট বাধা রক্ত বা দলা দলা রক্ত এর সমস্যা ফেস করেন। মেডিক্যালের ভাষায় একে মেন্সট্রুয়াল ক্লটিং বলে । আসলে এই মাসিকের জমাট বাধা রক্ত বা মেন্সট্রুয়াল ক্লটিং হল জেল বা জেলির মত জমাট বাধা রক্ত যা কিনা মাসিকের সময় বের হয়। এতে জরায়ুর ভিতরের স্তরের ছিড়া টিস্যু আর রক্তের মিশ্রণ থাকে। এটি দেখতে স্ট্রবেরির জেলির মত দেখতে আর এর রঙ উজ্জ্বল লাল থেকে গাড় লাল হয়।

স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিক ক্লাটিং বা মাসিকের রক্ত জমাট বাধা

আমি আগেই বলছি যে মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধা বা দলা দলা হওয়া স্বাভাবিক। তবে আগে দেখি কখন স্বাভাবিক আর কখন অস্বাভাবিক হবে।

যে লক্ষণে বুঝবেন স্বাভাবিক মেন্সট্রুয়াল ক্লটিং হচ্ছে বা মাসিকের সময় রক্ত দলা দলা যাচ্ছে

  • ক্লট বা রক্তের দলা গুলা হবে ছোট
  • এটা মাঝে মাঝে হবে। যেমন আপনার মাসিকের শুরুর একদিন বা দুই দিন এমন হবে। পরে আবার ভালো হয়ে যাবে।
  • এর রঙ উজ্জ্বল লাল থেকে গাড় লাল হবে।

যেহেতু মাসিকের রক্ত শিরা থেকে তৈরি হয় না , সেহেতু এটা কোন বিপদজনক না সাধারণত। ছোট যোনিতে লিংগ প্রবেশের নিয়ম কি?

যে লক্ষণে বুঝবেন অস্বাভাবিক মেন্সট্রুয়াল ক্লটিং হচ্ছে বা মাসিকের সময় রক্ত দলা দলা যাচ্ছে

  • যদি আপনার মাসিকের সময় বড় দলা দলা রক্ত যায়
  • যদি মাসিকের রক্তে বাজে গন্ধ থাকে
  • মাসিকের রক্তের রঙ লাল না হয়ে কালো বা বাদামি হয়
  • বড় রক্তের দলা যদি মাসিকের সব সময় যেতে থাকে। অর্থাৎ আপনার মাসিক যদি ৫ দিন হয় তাহলে যদি ৫দিনই এরকম জমাট বাধা রক্ত বা দলা রক্ত যেতে থাকে
  • সাধারণত আপনার যদি ২ ঘন্টা বা তারও কম সময়ে বা কিছু বেশি সময়ে প্যাড বা টেম্পন পাল্টাতে হয় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার অতিরিক্ত ব্লাডিং হচ্ছে। মেডিক্যালের ভাষায় একে heavy menstrual bleeding বলে। এরকম হলে দ্রুত ডাক্তার দেখান।

উপরের লক্ষণের থেকে কিছু লক্ষণ আপনার সাথে মিলে গেলে,আপনার জলদি ডাক্তার দেখানো উচিত।

যদি আপনার ডিম্বাণূ নিষিক্ত হতে গর্ভবতী হন আর হটাত করে যদি এরকম জমাট বাধা রক্ত পড়ে তাহলে আপনার মিসক্যারেজ হতে পারে। তবে শিউর হবার জন্য ডাক্তার দেখানো উচিত। মেয়েদের হস্তমৈথুন এর ক্ষতিকর দিক কি? মেয়েদের মাস্টারবেশন

মাসিকের সময় চাকা চাকা বা দলা দলা রক্ত যাওয়ার কারণ কি ?

মেস্ট্রুয়াল ক্লটিং বা মাসিকের সময় দলা রক্ত যাওয়ার কারণ জানার আগে আমাদের জানতে হবে মাসিক আসলে কিভাবে হয়।

যেসকল মহিলারা সন্তান জন্মদানে সক্ষম অর্থাৎ যাদের বয়স ১২ থেকে ১৫ বছরের মত তাদের প্রতি ২৮ থেকে ৩৫ দিন অন্তর অন্তর জরায়ুর ভিতর একটা আস্তরণ পরে যেখানে ডিম পরিপক্ক হয়। জরায়ুর ভিতরের আস্তরণকে বলা এন্ডোমেট্রিয়াম।

মহিলাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে মাসজুড়ে এই এন্ডোমেট্রিয়াম বৃদ্ধি পায় এবং ঘন হয় যাতে করে একটা ডিম পরিপক্ক করে ডিম্বাণুতে রুপান্তর করা ও শুক্রাণুর সাথে নিষিক্ত করা। তো যদি ডিম্বাণু , শুক্রাণুর সাথে নিষিক্ত না হয় তাহলে বিভিন্ন হরমোন ঐ আস্তরণকে নষ্ট করতে একটা সিগন্যাল দেয়। আর এই সিগন্যালের জন্যই ঐ আস্তরণ ছিড়ে যোনীপথে বের হয়ে আসে। একেই বলা হয় মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়। মাসিকের রক্তের ভিতর থাকে –

  • রক্ত
  • রক্তের বিভিন্ন উপজাতদ্রব্য
  • মিউকাস
  • টিস্যু

এসব পদার্থ মিলে মাসিকের রক্ত তৈরি করে ও জরায়ু মুখ বা সারভিক্স দিয়ে বাহিরে উন্মুক্ত হয়।

তো জরায়ুর ভিতরের স্তর ঝরে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সময় জরায়ুকে নিচের দিকে চাপ দেয় যাতে করে ভিতরের জিনিসগুলো বের হতে পারে সহজে। জরায়ুর ভিতরের টিস্যু, ঘন রক্ত ইত্যাদি ভাঙার জন্য, শরীর এন্টিকোয়াগুলেন্ট ক্ষরণ করে যা কিনা মাসিকের রক্তকে তরল রেখে সহজে বাহিরে বের হত সাহায্য করে। কিন্তু যখন এন্টিকুয়াগুল্যান্ট কম উৎপাদিত হয় তখনই মাসিকের রক্ত জমাট বাধে।

মাসিকের যেসব দিনে বেশি রক্ত যায়, সেসব দিনগুলোতে এরকম রক্ত জমাট বাধার সম্ভাবনা থাকে। আর এসব পিরিয়ডের শুরুর দিন গুলোতেই ঘটে। যদি মাসিকের রক্তপাত ৪ থেক ৫ দিন স্থায়ী হয় ও ২ থেক ৩ চা-চামচ রক্ত উৎপাদন করে তাহলে তাকে স্বাভাবিক বলা যায়।

মেডিক্যাল এর বই অনুসারে, প্রায় এক তৃতীয়াংশ মহিলাদের বেশি রক্তপাত, রক্ত জমাট বাধা এর সময় বেশি হতে পারে। প্রায় এক তৃতীয়াং মহিলারাদের পিরিয়ডের ব্লাড ফ্লো বা রক্তপাত এর বেশি হয় যে তাদের কয়েক ঘন্টা পর পর প্যাড পাল্টাতে হয়।

মেয়েদের মাসিক কিভাবে কেন হয়? ভিডিওসহ দেখুন Meyeder Masik Kivabe Keno Hoy?

মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধার কারণ কি ? এর থেকে কি কি রোগ হতে পারে?

শারীরিক এবং হরমোনাল যেসব ফ্যাক্টরগুলো আছে সেসব ফ্যাক্টরগুলা যে কোন মহিলার মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে আর এতে বেশি রক্তপাত হতেও পারে। আর বেশি রক্ত পাত হলে রক্ত জমাট বাধার চান্স বেড়ে যায়। আমরা দেখি কি কি রোগের কারণে মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধতে পারে।

জরায়ুতে বাধা মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধার কারণ

এক্ষেত্রে কিছু ফ্যাক্টর বা বাধা আছে যা কিনা আপনার জরায়ুর দেয়ালে এক্সট্রা প্রেশার দিয়ে বেশি রক্তপাত ও রক্তপ্রবাহ ঘটায়।

তো এসব বাধাগুলো আপনার জরায়ুর সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। আর যখন জরায়ু সঠিকভাবে সংকুচিত না হতে পারে তখন তরল রক্ত জরায়ু গহ্বর থেকে সহজে বের হতে পারে না ও আটকে যায়। ভিতরে রক্ত আটকে যাওয়ার ফলে সেখানে রক্ত জমাট বাধে , চাকা চাকা হয় বা দলা বাধে। এর পর জরায়ু যখন সম্পূর্ণরূপে সংকুচিত হতে পারে তখন এসব জমাট বাধা রক্ত বের হয়ে যায়।

জরায়ুতে যে সব বাধা থাকতে পারেঃ

  • ফাইব্রয়েড
  • এন্ডোমেট্রোসিস
  • এডেনোমাইসিস
  • ও ক্যান্সার টিউমার

আমি নিচে এসব রোগ ও রোগের লক্ষন আলোচনা করছি।

ফাইব্রয়েড মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধার কারণ

ফাইব্র্যয়েড হল এমন কিছু মাংসল টিউমার যা কিনা জরায়ুর দেয়ালে হয়ে থাকে। এটা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারেনা। ভারি রক্তপাতের পাশাপাশি এটি যেসকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে –

  • অনিয়মিত মাসিক
  • মাসিকের সময় বা অন্যসময় পিছনে ব্যাথা
  • স্বামী স্ত্রী সহবাসের সময় ব্যাথা
  • তলপেট বা সম্পূর্ণ পেট মোটা বা প্রসারিত হয়ে যাওয়া
  • ডিম্বাণু নিষিক্ত না হওয়া। অর্থাৎ যদি সেক্সের পরেও বাচ্চা না হয়।

আমি দেখা মতে, ৮০% মহিলারাই ইদানীং ৫০ বছরের ভিতর জরায়ুতে ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। এর কারণ হতে পারে বংশগত রোগ আর প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন হয়ত এর জন্য দায়ী।

এন্ডোমেট্রিওসিস মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধার কারণ

সহজভাষায় বললে , জরায়ুর ভিতরের স্তরে যে কোষ গুলো জন্মানোর কথা সেসব কোষগুলো জরায়ুর বাহিরে যেমন যোনীর ভিতর বৃদ্ধি পায় তাহলে এই সমস্যা দেখা দেয়।

এর লক্ষণ হল ঃ

  • মাসিকের সময় ব্যাথা হবে। মাসিকের রক্ত ক্রিমের মত হবে।
  • পিরিয়ডের সময় বমি, ডাইরিয়া বা বমি বমি ভাব হবে।
  • সেক্স করার সময় অসুবিধা বা আরাম না পাওয়া
  • ডিম্বাণু নিষিক্ত না হওয়া
  • পেলভিক অঞ্চলে ব্যাথা হওয়া
  • অস্বাভাবিক রক্তপাত যেখানে রক্ত জমাট বাধতেও পারে, নাও বাধতে পারে।

এর আসলে কারণও অজানা। অনুমান করা হয়ে থাকে যে, বংশগত কারণ , হরমোন ও আগের পেলভিক সার্জারি হয়ত এর জন্য দায়ী।

এডোনোমায়োসিস মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধার কারণ

এই রোগ তখনই হয় যখন জরায়ুর আস্তরন কোন অজানা কারণে জরায়ূর দেয়ালে বড় হতে থাকে। আর এটি জরায়ুকে বড় ও ঘন করে তুলে। এর জন্য দীর্ঘস্থায়ী ও ভারি রক্তপাত ছাড়াও এর জন্য জরায়ু অনেক বড় এমনকি তিনগুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

এই সময়ে আপনি অবিবাহত হলেও কাঠি পরীক্ষায় আপনার রেজাল্ট পজিটিভ আসতে পারে।

ক্যান্সার মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধার কারণ

ক্যান্সার বা ক্যান্সারাস টিউমার খুবি রেয়ার একটা রোগ যা কিনা জরায়ু ও জরায়ুমুখের সামনে পাওয়া যায়। আর এর জন্য ভারি রক্তপাত হতে পারে।

হরমোনে ভারসাম্যহীনতা মাসিকের সময় রক্ত জমাট বাধার কারণ এবং মাসিকের সময় চাকা রক্ত যায়

জরায়ুর আস্তরণ সঠিকভাবে বড় ও ঘণ হওয়ার জন্য প্রোজেস্টেরণ হরমোন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য অনেক বেশি দরকার হয়। এর ভারসাম্য নষ্ট হলে ভারী রক্তপাত হতে পারে।

যেসকল কারণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারেঃ

  • পেরিমেনোপজ
  • মেনোপজ
  • অবসাদ
  • অনেক বেশি ওজন হওয়া বা অনেক কম ওজন হওয়া

হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মেইন লক্ষন হল অনিয়মিত মাসিক। যেমন আপনার মাসিক চক্র বেশি বা কম হওয়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য হয়। মাসিকের সময় চাকা রক্ত যায় কেন

মিসক্যারেজ হলে মাসিকের সময় চাকা রক্ত যায়

মেডিক্যাল অনুসারেম পৃথিবীতে যত গর্ভধারণ হয় , তার অর্ধেকই মিসক্যারেজ হয়। এসব কোনো মহিলা জানার আগে ঘটে যায়। যখন মিসক্যারেজ হয় তখন ভারি রক্তপাত, ক্রিমের মত মাসিক রক্ত পরা ও জমাট রক্ত পড়া এসব দেখা দেয়।

চিকিৎসাঃ

যদি আপনার নিয়মিত মাসিকের সাথে রক্ত যায় তাহলে আপনার দেরি না করেই ডাক্তার দেখানো উচিত। আর এর একটা মেইন কারণ হতে পারে লৌহ স্বল্পতা যাকে আমরা মেডিক্যালের ভাষায় বলি Iron deficiency anemia. এই এনিমিয়ার জন্য আপনার লোহিত রক্ত কণিকা অভাব দেখা দেয়। এর লক্ষন হল ঃ মাসিকের সময় চাকা রক্ত যায় কেন

  • ক্লানি
  • অবসাদগ্রস্থতা
  • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়
  • শ্বাস কষ্ট দেখা দেয় বা ঘন ঘন জোরে শ্বাস নেয়
  • বুকে ব্যাথা

ডাক্তারের কাছে গেলে, যদি ডাক্তারের মনে হয় যে আপনার কোন রোগ হতে পারে তাহলে ডাক্তার আপনাকে ব্লাড টেস্ট দিতে পারেন যা বাংলাদেশে আমরা সিবিসি টেস্ট বলে থাকে। এলাকাভেদে টেস্টের খরচ ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা হতে পারে। মাসিকের সময় চাকা রক্ত যায় কেন

আজকে আমরা মাসিকের সময় চাকা চাকা রক্ত যাওয়ার কারণ জানলাম। আশা করি আপনাদের একটু হলেও উপকারে আসছে। যদি কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে আমাকে ফেসবুকে জানাতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক পেজে যেতে এখানে ক্লিক করুন।

ধন্যবাদ সবাইকে ।

মেয়েদের মাসিক কিভাবে কেন হয়? ভিডিওসহ দেখুন Meyeder Masik Kivabe Keno Hoy?

Comments

Popular posts from this blog

জরায়ু কেটে ফেললে কি সহবাস করা যায়?

যোনিতে লিংগ প্রবেশের নিয়ম