ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ মানে কি? ফ্যাটি লিভার গ্রেড 1 সহ হালকা হেপাটোমেগালি মানে কি ?

লিভার টেস্টের রিপোর্টে অনেক সময় দেখা যায় যে, টেস্টের রিপোর্টে লেখা থাকে যে, ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ মানে কি? কেনো ফ্যাটি লিভার হয়? কিভাবে ফ্যাটি লিভার হয় ইত্যাদি। আজকে আমরা আলোচনা করবো ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ মানে কি? ফ্যাটি লিভার গ্রেড 1 সহ হালকা হেপাটোমেগালি মানে কি ? ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ এর মানে কি আমি আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ মানে কি?

ফ্যাটি লিভার রোগ কি?

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ কি এটা জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে ফ্যাটি লিভার রোগ কি? কেনো ফ্যাটি লিভার রোগ হয়? যদি রোগের কারণ জানতে পারি তাহলে বুঝা সুবিধা হবে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ মানে কি?

আমরা জানি যে, লিভার বা যকৃত এর কাজ হল দেহের বিপাকীয় কাজে অংশ নেয়া। যদি এমন হয় যে, লিভারের গায়ে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে লিভার সঠিকভাবে বিপাকীয় কাজে অংশ নিতে পারে না তখন তাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার।

ফ্যাটি লিভার রোগ দুই ধরণের হতে পারে। যদি এলকোহলের জন্য ফ্যাটি লিভার হয় তাহলে থাকে বলা হয় এলকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD) আর যদি এমনি সাধারণ কারণে হয় তাহলে তাকে নন এলকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলে(NAFLD)।

আমাদের লিভারে বেশ কিছু চর্বি সবসময়েই থাকে। কারণ এক গ্রাম চর্বি ভেঙ্গে প্রায় ৯ কিলোজুলের মত শক্তি পাওয়া যায়। অন্যান্য যে কোন খাবারের থেকে চর্বি থেকে বেশি শক্তি পাওয়া যায়। যদি লিভারের গায়ে জমে থাকা চর্বি লিভারের ওজনের ৫-১০% হয় তখন একে বলা হয় ফ্যাটি লিভার কন্ডিশন।

নন এলকোহলিক ফ্যাটি লিভারের রোগ দুই ধরণের হতে পারে।

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (NAFL): ফ্যাটি লিভার গ্রেড 1

যেখানে লিভারে চর্বি জমেছে কিন্তু কোনো প্রদাহ সৃষ্টি করে না।

নন-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস (NASH):

এক্ষেত্রে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয় এবং লিভারে ব্যাথাও হয়। তবে খুব বেশি হলে লিভারে দাগ দাগ হতে লিভার সিরোসিস হতে পারে যা কিনা শেষে লিভার ক্যান্সারে রূপ নেয়। ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ মানে কি?

অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলতে অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে লিভারে চর্বি জমে যাওয়াকে বোঝায়, যা এমনকি কয়েক দিনের বেশি মদ্যপানের ব্যবধানে ঘটতে শুরু করতে পারে।

কিভাবে ফ্যাটি লিভার নির্ণয় করা হয়?

সাধারনত ফ্যাটি লিভার শুরুর পর্যায়ে তেমন কোন উপসর্গ দেখায় না। কারণ তখন লিভারে ব্যাথাই হয় না। যদি শরীরের অন্য কোন সমস্যার জন্য টেস্ট করা হয় তখন ধরা পরতে পারে। তবে ফ্যাটি লিভার জানার জন্য বেশিরভাগ সময়েই রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১

লিভার ফাংশন টেস্ট এর মাধ্যমে লিভারের কার্যকরীতা জানা যায়। যা কিনা এলবুমিন বা এরকম কিছু প্রোটিনের মাত্রা টেস্ট করে জানা যায়। যদি আপনার রক্তে এলবুমিন এর পরিমাণ কম হয় তাহলে বুঝবেন লিভারের সমস্যা হয়েছে।

ইলাস্টোগ্রাফি (ফাইব্রোস্ক্যান®) নামে একটি বিশেষ ধরনের আল্ট্রাসাউন্ডের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে যদি রক্ত পরীক্ষায় লিভারের ক্ষতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এটি লিভারে দাগ বা লিভার সিরোসিস এবং চর্বি তৈরির পরিমাণ দেখাতে পারে।

ফ্যাটি লিভার কত প্রকার?

সাধারণত ফ্যাটি লিভার তিন প্রকারের হয়ে থাকে। ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১, ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এবং ফ্যাটি লিভার গ্রেড ৩। কার কোন গ্রেডের ফ্যাটি লিভার রোগ হয়েছে তা ইলাস্ট্রোগ্রাফির মাধ্যমেই জানা যায়।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ মানে কি?

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ তখনই হয় যখন লিভারের বাহিরের দিকে চর্বি জমা হয় এবং তা লিভারের কাজে কোন হস্তক্ষেপ করে না। ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ হলে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ হলে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত তেমন কোন উপসর্গ দেখা যায় না। তবে প্রতি ছয় মাসে সিবিসি টেস্ট করলে লিভারের অবস্থা জানা যায়। তবে আল্ট্রাসাউন্ড বা অন্য কোন টেস্ট করলে এটা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

যেহেতু ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ প্রাথমিক অবস্থা তাই ডাক্তাররা তখন ব্যায়াম এবং খাদ্যাভাস পরিবর্তন করার জন্য এবং এলকোহল থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়। আর চর্বি যুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা অবশ্যক।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড 1 সহ হালকা হেপাটোমেগালি মানে কি ?

হেপাটোমেগালি শব্দের অর্থ হলো লিভারের আকার বড়ো হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যখন আপনার লিভারের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে, বা ফুলে গেলে তাকে হেপাটোমেগালি বলে। ফ্যাটি লিভার গ্রেড 1 সহ হালকা হেপাটোমেগালি মানে হলো আপনার লিভারে চর্বি জমেছে আর লিভারের আকারও বেড়ে গেছে । এমন হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

গ্রেড 1 ফ্যাটি লিভার কি নিরাময়যোগ্য?

হ্যা গ্রেড ১ ফ্যাটি লিভার সম্পুর্ণ নিরাময়যোগ্য। তবে আপনাকে অবশ্যই খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে আর প্রতি সপ্তাহে আধা ঘন্টার বেশি অন্তন্ত পাচ বার ব্যায়াম করতে হবে।

গ্রেড ১ ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত?

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ হলে প্রথমেই আপনার চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া নিষেধ। আপনাকে শুধু সবুজ শাকসবজি , ফলমূল এবং সালাদ খেতে হবে। তবে শুধু ফলের রস খাওয়া যাবে না। কারণ ফলের রসে ফ্রুক্টোজ থাকে আর এতে কোন ফাইবার থাকে না। এর জন্য চর্বিও কমে না। যদি আপনি প্রসেস ফুডস যেমন বাটার, মেয়োনিজ ইত্যাদি খান তাহলে এর বদলে কার্বোহাইড্রেড জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, যব ইত্যাদি খাবেন।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ এর চিকিৎসা কি?

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ আপনার লিভার ডিজিজের প্রথম ধাপ। যদি ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ হয় তাহলে আপনাকে ডাক্তার বেশি ঔষুধ দিবেন না। কারণ তখন ব্যায়াম এবং খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই তা পরিবর্তন করা যায়। মোট কথা ডিসিপ্লিন লাইফ লিড করতে হবে।

যদি আপনার ওজন বেশি হয় তাহলে আপনাকে প্রথমেই ওজন কমাতে হবে। শরীরের ওজন ১০% কমালেই আপনার ব্যাথা অনেক কমে যাবে। তবে দ্রুত ওজন কমাবেন না। আস্তে আস্তে ওজন কমাবেন। আর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

খাবার দাবারের অভ্যাস চেঞ্জ করলে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ রোগ অনেকটাই চেঞ্জ করা সম্ভব। চেষ্টা করবেন যাতে খাবারে ফাইবার বা আশের পরিমান বেশি থাকে। শাক সবজি এবং শিমে ফাইবার বেশি থাকে। সয়াবিন তেলের বদলে জলপাই তেল খেতে পারেন। আর ফল খেতে হবে।

ডায়াবেটিস থাকলে রক্তের ডায়াবেটিস এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এর জন্য সবসময় ব্যায়ামের উপর থাকতে হবে।

সত্যি বলতে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ এর কোন ঔষুধ নাই। ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এবং ফ্যাটি লিভার গ্রেড ৩ হতে ঔষুধ দেয়া শুরু হয়।

আজকে আমি আলোচনা করলাম ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ মানে কি, ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ কেনো হয়, ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ কখন হয় , ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ এর চিকিৎসা কি

Comments

Popular posts from this blog

জরায়ু কেটে ফেললে কি সহবাস করা যায়?

যোনিতে লিংগ প্রবেশের নিয়ম